সিগারেটের ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিলেন মৃত্যুদণ্ডের রায়!

বাংলাদেশের প্রথম সিরিয়াল কিলার রসু খাঁ। এতদিন আলোচনা থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন। চাঁদপুর জেলা কারাগারে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। অনেকেই তাকে ভুলতে বসেছিলেন।

কিন্তু হত্যা মামলায় বুধবার রসু খাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কাঠগড়ায় তাকে দেখা গেছে। তবে আদালতের রায় তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। রায় ঘোষণার আগে যেমন ছিলেন, পরেও একই রকম দেখা গেছে তাকে।

ফাঁসির রায় শোনার পরও স্বাভাবিক আচরণ করছেন সেই রসু। এর আগে জেলখানা থেকে পুলিশ প্রহরায় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াবার আগে আয়েশ করে সিগারেট ফুঁকছিলেন। পরনে ছিলে রঙচঙা টিশার্ট আর ধবধবে সাদা লুঙ্গি, মাথায় টুপি। ওই সময় তার হাতে ‘গোল্ডলিফ’ সিগারেটের একটি প্যাকেটও ছিলো। রায় তার পক্ষে কি বিপক্ষে যাক এটা নিয়ে কোন টেনশন ছিলো না। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। রায় ঘোষণার পরেও তাকে দেখা গেছে সিগারেটের প্যাকেট হাতে। ছিল নির্বিকার চাহনি।

রায় ঘোষণার আগে রসু খাঁ চাঁদপুর জেলা কারাগারে একেবারেই স্বাভাবিক আচরণ করছেন। কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, রসু অন্যান্য মানুষের মতোই আচরণ করছে, কোন অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি।

আদালতে আগত অনেকেই বলেন, রসু খাঁর মতো ধর্ষক আর দুর্ধর্ষ খুনির নাম আগে শোনা যায়নি। তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। নেই কোনো অনুতাপ। সে আদালতের রায়ের পরেও সিগারেট ফুঁকেছে। মনে হয়, সিগারেটের ধোঁয়ায় সে উড়িয়ে দিয়েছে মৃত্যুদণ্ডের রায়।

রসু খাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা ১০টি মামলার মধ্যে একটি মামলার রায় দেয়া হয়েছে। বাকি ৮টি মামলা রয়েছে বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ থানায় ১০টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১টি হত্যা এবং অপরগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে।

তার মামলাগুলো বিচারের জন্য চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে সেখানে একটি মামলার রায়ে রসু খালাস পেয়ে যান। এ অবস্থায় তার বাদবাকি মামলাগুলো চাঁদপুর আদালতে পুনরায় ফেরত পাঠিয়ে দেয় ট্রাইব্যুনাল।

বর্তমানে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১টি এবং অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে ৮ টি মামলার বিচার চলছে। এর মধ্যে টঙ্গীর গার্মেন্টস কর্মী শাহিদা বেগম হত্যা মামলার রায় দেয়া হলো।

চাঁদপুরের মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খা ভালবাসায় পরাস্ত হয়ে এক সময় সিরিয়ার কিলারে পরিণত হয়। ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তার লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের চিত্র বেরিয়ে আসে। নিজের মুখে স্বীকার করে ১১ নারী হত্যার কথা।

তার টার্গেট ছিল ১০১টি হত্যাকাণ্ডের। কিন্তু ফরিদগঞ্জে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর সেই আশা গুঁড়েবালিতে পরিণত হয়। রসু যাদের হত্যা করেছে তারা সবাই ছিল গার্মেন্টস কর্মী।

রসু ভালবাসার অভিনয় করে নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ঢাকার সাভার ও টঙ্গী এলাকা থেকে চাঁদপুরে এনে প্রত্যন্ত এলাকায় নিয়ে যেয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। হত্যার স্বীকার ওইসব হতভাগ্য মেয়েদের অধিকাংশেরই সঠিক নাম ঠিকানা বা পরিচয় আজো জানা যায়নি।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (অ্যাডিশনাল পিপি) অ্যাডভোকেট সাইয়েদুল ইসলাম বাবু জানান, মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি রসুকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। অন্যান্য মামলায়ও তার শাস্তি হবে বলে আশা করছি।



মন্তব্য চালু নেই