সার্চ কমিটি : যে পাঁচজনকে নিয়ে আপত্তি বিএনপির

নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করতে গঠিত ‘সার্চ কমিটি’র ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের বিষয়েই আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। ‘সার্চ কমিটি’র প্রধান করা হয়েছে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে। ২০১২ সালে গঠিত ‘সার্চ কমিটি’রও প্রধান ছিলেন তিনি।

গত শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, যে কমিটির প্রস্তাবক্রমে কাজী রবিকউদ্দিন কমিশনের মতো অযোগ্য, অনুগত ও মেরুদণ্ডহীন ও বিতর্কিত কমিশন নিযুক্ত হয়, সেই কমিটির প্রধানকেই নতুন ‘সার্চ কমিটি’র প্রধান করার অর্থ হলো, সরকার কাজী রকিবউদ্দিন কমিশনের মতোই আরেকটা অযোগ্য ও অনুগত নতুন নির্বাচন কমিশন করতে চায়। এ সময় বর্তমান ‘সার্চ কমিটি’র আরেক সদস্য হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে নিয়ে আপত্তির কারণও জানান মির্জা ফখরুল। তার দাবি, এই বিচারপতি ছাত্রলীগের একজন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী হিসেবে বহুল পরিচিত ছিলেন। তার পিতা আখলাকুর রহমান নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার ছোট ভাই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত।

পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিককে নিয়েও আপত্তি জানান মির্জা ফখরুল। তার দাবি, এই সরকারি কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের সমর্থক। মির্জা ফখরুল বলেন, চৌদ্দ সালের ৫ জানুয়ারির মহা বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নিার্বচনের সময় তিনি (মোহাম্মদ সাদিক) ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব। নানা অনিয়মে ভরা ওই নির্বাচনকে নিয়মসিদ্ধ করার পুরস্কার হিসেবে অবসর গ্রহণের পর তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় চুক্তিভিত্তিতে পাবলিক সার্ভিস কমিশন-পিএসসির চেয়ারম্যান করা হয়। সরকারি অনুগ্রহভাজন এবং সহকর্মীদের কাছে আওয়ামী ঘরানার সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই আমলা সরকারি ইচ্ছা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন- এটাই স্বাভাবিক।

‘সার্চ কমিটি’র একমাত্র নারী সদস্য শিরীণ আখতার সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত বলেও দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এই কমিটির একমাত্র নারী সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী নেত্রী, ২০১৪ সালে শিক্ষক সমিতির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর তার পিতা মরহুম আফসান কামাল চৌধুরী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি নিজেও (শিরীণ আখতার) কক্সবাজার মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। কাজেই কোনোভাবেই তাকে নিরপেক্ষ বলা যায় না।

এ ছাড়া ‘সার্চ কমিটি’র আরেক সদস্য মহাহিসাব নিরীক্ষক মাসুদ আহমেদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আপত্তির কথা জানাননি মির্জা ফখরুল। তবে তিনিও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকারের অধীনস্থ একজন কর্মকর্তা হয়ে তিনি (মাসুদ আহমেদ) সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। অর্থাৎ তিনিও ক্ষমতাসীন সরকারের ইচ্ছাপূরণে কোনো বাধা নন। মির্জা ফখরুল বলেন, এমন সব ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত ‘সার্চ কমিটি’কে নির্দলীয় কিংবা নিরপেক্ষ বিবেচনা করার কোনো অবকাশ নেই।

তবে ‘সার্চ কমিটি’র বাকি সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বিষয়ে কোনো আপত্তি তোলেনি বিএনপি।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য যেসব নাম সুপারিশ করে তার মধ্যে শারমীন মুরশিদও ছিলেন। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আলোচনায় ছিলেন সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের নিয়োগ দেয়া হয়নি।



মন্তব্য চালু নেই