সার্ক এখন মেগা-ফ্লপের সংস্থা!
অতীতের ব্যর্থতা কাটিয়ে নেপালের কাঠমাণ্ডুতে সার্ককে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা। এর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও রয়েছেন।
এবারের ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতের সহযোগিতা বাড়াতে তিনটি চুক্তি সাক্ষর নিয়ে সবাই বেশ আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রত্যাশিত চুক্তি তিনটি না করেই শেষ হলো অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনের কর্মসূচি। আজ বৃহস্পতিবার সমাপনী অনুষ্ঠানে ভালো কিছু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর এরমধ্য দিয়ে সার্কের মহৎ উদ্দেশ্য আরেকবার হোঁচট খেলো।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, সম্মেলনের প্রথম দিনে ভারতসহ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে
সমন্বিত বৈদ্যুতিক গ্রিড স্থাপন, সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগে সহযোগিতা সংক্রান্ত তিনটি প্রস্তাব আনা হয়েছিল। কিন্ত তিনটি প্রস্তাবেই আপত্তি জানিয়েছে পাকিস্তান। আন্ত:দেশীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে চুক্তি তিনটি জরুরি ছিল।
খবরে বলা হয়েছে, প্রত্যাশিত চুক্তি তিনটি সম্পাদিত না হওয়ায় নেপাল সম্মেলনের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই নেপাল পাকিস্তানকে রাজি করাতে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কাঠমান্ডুর বাইরে ধুলিখেলে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর আলাদা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বৃহস্পতিবার।
ভারতের মূখপাত্র বলেছেন, চুক্তি তিনটি না হওয়ায় পাকিস্তানের ভূমিকায় তারা খুবই হতাশ।
তবে এর জন্য ভারতও কম দায়ী নয়। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। সম্মেলনের প্রথম দিনে সেই বিরোধ প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেন। নরেন্দ্র মোদি সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিবেশি সব দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কোন বৈঠক ছিল না। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ঘটনাটি পাকিস্তানতে ক্ষুব্ধ করে থাকতে পারে।
এই বৈঠকের বিষয়ে জিওটিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বলেন, আলোচনা বাতিলের সিদ্ধান্ত দিল্লির একতরফা। বল এখন ভারতের কোর্টে। আলোচনার যে কোনো উদ্যোগ এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে।
মোদি তার ভাষণে বলেন, যেহেতু আমরা সার্ককে জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছি, তাই পৃথিবীর যে কোনো জায়গার চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সমষ্টিগত প্রচেষ্টা বেশি জরুরি।
তবে মোদি মুখের এ কথা বাস্তবের সঙ্গে মিলে না।
এটা বলার অপেক্ষা রাখেন না যে, গত ৩০ বছরে সদস্য দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নে সার্কের ভূমিকা একেবারেই নগণ্য।
২০০৬ সালে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলেও সার্ক দেশের সদস্য রাষ্ট্রগুলো একে অপরের সঙ্গে তার মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ সম্পন্ন করে থাকে। যোগাযোগ ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও খুব কম দেশের মধ্যে সহযোগিতা বিদ্যমান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যকার সহযোগিতাই হচ্ছে সার্ক সফলতার মূল চাবিকাঠি। কাশ্মীরে সীমান্ত সহিংসতার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে কাঠমুন্ডু শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গতমাসের ওই সহিংসতায় ২০ জন মারা যান। আর এই অবস্থার মধ্যে নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে কাঠমুন্ডুতে কোণঠাসার কৌশল নেন। যার ফল হলো নিষ্ফলা কাঠমুণ্ডু সম্মেলন।
মন্তব্য চালু নেই