সারাদেশে বজ্রপাতে ১৩ জনের মৃত্যু
সারাদেশে মঙ্গলবার দিনব্যাপী বজ্রপাতে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ময়মনসিংহে ৩ জন, সিরাজগঞ্জে ১, সুনামগঞ্জে ১, ঝিনাইদহে ২, মুন্সিগঞ্জের ১, হবিগঞ্জে ১, গাইবান্ধায় ১, চুয়াডাঙ্গায় ২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন করে মারা গিয়েছেন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ শহরের জিলা স্কুল মাঠে মঙ্গলবার দুপুরে ফুটবল খেলার সময় আকস্মিক বজ্রপাতে মাহমুদুল হাসান তামিম নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্র মারা গেছে। এছাড়াও ধোবাউড়া উপজেলায় সকালে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত স্কুলছাত্রর সহপাঠী তাহা জানায়, স্কুল বন্ধ থাকায় দুপুরে মাঠে খেলতে আসে মাহমুদুল হাসান তামিমসহ সহপাঠী ও কয়েকজন বন্ধু।
দুপুরে হালকা বৃষ্টির মধ্যে খেলছিল সবাই। বেলা ২টার দিকে আকস্মিক বজ্রপাত হলে তামিমের গুরুতর আহত হয়। পরে বন্ধুরা মিলে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তামিমকে মৃত ঘোষণা করে।
নিহত তামিম জিলা স্কুলের দিবা শাখার (সি গ্রুপ) নবম শ্রেণির ছাত্র। তার বাসা শহরের জামতলা এলাকায়।
এদিকে ধোবাউড়া উপজেলায় সকালে আকস্মিক বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরও একজন আহত হয়। উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের রাউতি গ্রামে সকাল সাড়ে ১১টা দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- একই গ্রামের আ. মালেকের ছেলে এংরাজ মিয়া (৪০) ও আরশাদ মিয়া (৪৫)।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন তিনজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় বজ্রপাতে কহিনুর বেগম (৫০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে মাছুয়াকান্দী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কহিনুর বেগম সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের মাছুয়াকান্দি গ্রামের আব্দুল হালিমের স্ত্রী।
স্থানীয় বাসিন্দা মোর্শেদ হাসান রাজিব জানান, বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে ওই নারী মাঠ থেকে ছাগল আনতে যায়। এ সময় বজ্রপাতে তার শরীর ঝলসে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জ
সুনামঞ্জ সদর উপজেলার বৈষারগাঁও গ্রামে বজ্রপাতে সাইফুল ইসলাম (১৬) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় তার বড় ভাই ডালিম (২৬) আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সাইফুল ও আহত ডালিম সদর উপজেলার বৈষারগাঁও গ্রামের আসাদ আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে সাইফুল ও ডালিম বাড়ির পাশের মাঠে যায়। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে তারা গুরুতর আহত হন। পরে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা তাদের সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাইফুলকে মৃত ঘোষণা করেন এবং ডালিমকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করেন।
অপরদিকে একই উপজেলার সোনাপুর গ্রামে একই সময়ে জামেল (৩০) নামের এক গৃহবধূ বজ্রপাতে আহত হয়ে সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু ও কালীগঞ্জে বজ্রপাতে ২ জন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন -হরিনাকুন্ডু উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের ইমদাদুল হকের ছেলে আমান উল্লা (৪৫) ও কালীগঞ্জ উপজেলার মোল্লাডাঙ্গা গ্রামের শফিয়ার রহমানের স্ত্রী আনজু আরা (৪৫)। মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আনজু আরার ভাই শরিফ জানান, বিকেল ৩টার দিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রচণ্ড বৃষ্টি ও ঝড় শুরু হয়। এ সময় তার বোন বাড়ির পাশে ধান গোছানোর কাজ করছিল। এ সময় বজ্রপাতে তার বোনের মৃত্যু হয়।
এদিকে হরিণাকুন্ডুতে নিহত আমান উল্লার ছোট ভাই আয়াতুউল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তার ভাই বিকেলে মাঠ থেকে ধান আনার সময় বজ্রপাতে মারা যায়।
মুন্সিগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার লস্করপুর এলাকায় আরিয়াল বিলে বজ্রপাতে মো. ভিখু (২৫) নামে এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে।
ভিখু কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের সাংকু মিয়ার ছেলে। তিনি লস্করপুর গ্রামের জয়নাল শেখের বাড়িতে ধান কাটতে এসেছিলেন।
এ ব্যাপারে শ্রীনগর থানার ওসি এসএম আলমগীর হোসেন জানান, দুপুর ১টার দিকে আড়িয়াল বিল থেকে ধান কেটে গৃহস্থের বাড়িতে আসার পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বজ্রপাতে আবদুল বাছিত (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বাছিত উপজেলা সদরের জাতুকর্ণপাড়ার মজম উল্লাহর ছেলে।
এলাকাবাসী জানায়, বাছিত দুপুরে গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে ধান কাটতে যান। এ সময় বজ্রপাত হলে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের টিয়ারগাঁও গ্রামে নবচন্দ্র চন্দ (২৮) নামে এক ভ্যানচালক মঙ্গলবার সকালে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। নিহত নবচন্দ্র ওই গ্রামের প্রেমাচন্দ্র চন্দের ছেলে।
গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান জানান, নবচন্দ্র সকাল ১০টার দিকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির সময় ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে পাশের দিঘিরহাট বাজারে যাওয়ার জন্য বের হন। বাড়ি থেকে সামান্য কিছুদুর যাওয়ার পর হঠাৎ বজ্রপাতের ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার ভ্যানটিও বজ্রপাতে পুড়ে যায়।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গায় বজ্রপাতে এক শিশুসহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কুতুবপুর ও কানাইডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- কুতুবপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে সামাদ আলী (২৬) ও পাশের কানাইডাঙ্গা গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মালেক (৭)।
স্থানীয়রা জানায়, দুপুরে চুয়াডাঙ্গায় শুরু হয় মুষুলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টির সাথে সাথে পড়তে থাকে বজ্রপাত। এ সময় কুতুবপুর গ্রামের মাঠে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হয় সামাদ আলী। প্রায় একই সময়ে পাশের কানাইডাঙ্গা গ্রামের বজ্রপাতে নিহত হয় শিশু আব্দুল মালেক। ঘটনার সময় ওই শিশু বাড়ির পাশে বাগানে আম কুড়াচ্ছিল বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীণগরে বজ্রপাতে খোদেজা বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীঘর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খোদেজা বেগম ওই গ্রামের কবির মিয়ার স্ত্রী।
নবীনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম শিকদার জানায়, দুপুরে প্রচণ্ড ঝড়ের সময় বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে যাওয়া শিশুপুত্র রাকিবকে ডেকে আনতে যান খোদেজা। এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
মন্তব্য চালু নেই