সাবেক ছিটমহলে বাবার নাম পরিবর্তনের হিড়িক
সাবেক ছিটমহলের প্রায় হাজার খানেক তরুণ-তরুণী নিজেদের বাবার নাম বদল করতে আবেদন করতে শুরু করেছে। এদের সবাই ভারতের অভ্যন্তরে থাকা সাবেক বাংলাদেশী ছিটমহলগুলোর বাসিন্দা। খবর বিবিসির।
যেসব ছাত্র-ছাত্রী ভারতীয় কোনও ব্যক্তিকে নিজের বাবা পরিচয় দিয়ে ভারতের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে, তারা এখন সেই নকল বাবার পরিচয় ঝেড়ে ফেলে নিজেদের আসল বাবার নামে পরিচিত হতে চাইছে।
বাংলাদেশী ছিটমহলের বাসিন্দা হলে ভারতের স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করা যেত না ২০১৫ সালে ছিট বিনিময়ের আগে পর্যন্ত। তাই অনেকে ভারতীয় গ্রামের বাসিন্দা হিসাবে নিজের পরিচয় দিতেন আর সেখানকার কোন ব্যক্তিকে নিজের বাবা বানিয়ে নিতেন কাগজে কলমে।
সাবেক ছিটমহল মশালডাঙ্গা গ্রামের জয়নাল আবেদিন কুচবিহার কলেজ থেকে বাংলায় এম এ পাশ করেছেন। তার আসল বাবার নাম বেল্লাল হোসেন। তবে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বাবার পরিচয় লেখা আছে শচীনন্দন গ্রামের ভারতীয় নাগরিক বেল্লাল শেখের।
পোয়াতুরকুটি সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা বামনহাট হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে আফসানা। তার বাবার নাম জমশের আলি, তবে স্কুলের খাতায় বাবা হিসাবে নাম লেখা আছে কালমাটি গ্রামের আমজাদ আলির। ওই গ্রামেরই রহমান আলি, বা মশালডাঙ্গার সাদ্দাম হোসেন – সকলেই নকল ভারতীয় বাবার নাম নিয়ে ভারতের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়তে পড়াশোনা শেষ করেছেন, অথবা এখনও পড়ছেন।
জয়নাল আবেদিন বলছিলেন, “স্কুলে ভর্তির সময়ে খুব প্রয়োজনীয় না হলেও মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন করানোর সময়ে বাবার পরিচিতি লাগে। আর সেই নামটাই পরবর্তীতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব জায়গায় ব্যবহার করতে হয়। ছিটমহল বিনিময় হয়ে যাওয়ার পরে যেখানেই চাকরীর আবেদন করছি অথবা ব্যাঙ্ক লোনের আবেদন করছি, সেখানেই এফিডেভিট জমা দিতে হচ্ছে যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটে আমার বাবার নাম ভুল ছিল।”
পোয়াতুরকুটির যুবক শফিকুল ইসলাম নকল বাবার নাম নিয়েই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরী নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই নকল বাবা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বড় অঙ্কের টাকা দাবী করে বসেন। সেটা দিতে না পারায় শফিকুল ইসলামের সে যাত্রায় চাকরী হয়নি। এবার তিনি আসল বাবার নামে পরিচিত হতে চেয়ে এফিডেভিট দাখিল করে সেনাবাহিনীতে চাকরীর জন্য আবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ছিটমহলগুলির বিনিময়ের দাবীতে যে আন্দোলন চলেছিল, তার নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলছিলেন, “সংবিধান সংশোধন করে শুধু জমিসংক্রান্ত বিষয়গুলির নিষ্পত্তির চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু মানবসম্পদের সমস্যাগুলোর দিকে খেয়াল রাখা হয়নি তখন। শিক্ষাসংক্রান্ত এই সমস্যাগুলো সমাধানের দিকে রাজ্য সরকার আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এক্ষুণি নজর দেওয়া দরকার।”
কী ভাবনা চিন্তা করছে সরকার? উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বললেন, “আমরা সাবেক ছিটমহলগুলোতে একটা সমীক্ষা করে দেখছি যে কত জনের এই বাবার নাম নিয়ে সমস্যা আছে। শিক্ষা দপ্তর চিন্তাভাবনা শুরু করেছে যে কীভাবে এর সমাধান করা যায়।”
ব্যক্তিগতভাবে যেমন তারা এফিডেভিট দাখিল করছে, তেমনই জেলা প্রশাসনের কাছে যৌথভাবেও একটি আবেদন করছে সাবেক ছিটমহলের তরুণ-তরুণীরা। আনুমানিক এক হাজারেরও বেশী সাবেক ছিটমহলবাসী নকল ভারতীয় বাবা বানিয়েছিলেন। যৌথ আবেদনটিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে দিন কয়েক আগে।
মন্তব্য চালু নেই