সাপাহারে গৃহবধু আদালতে ন্যায় বিচার চান

নওগাঁর সাপাহারে যৌতুকের দাবীতে বেবী আকতার নামের এক গৃহবধুকে নির্যাতন ও শ্বাসরোধে হত্যা চেষ্টা ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আসামী পক্ষে হাতিয়ে নিতে প্রভাবশালী মহলের অব্যাহত অপতৎপরতার অভিযোগ উঠেছে। ন্যায় বিচার পেতে নির্যাতিত গৃহবধু বেবী আকতার ও তার অসহায় পরিবারের জন্য বিজ্ঞ আদালত একমাত্র ভরসা।

মামলার সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার তিলনী গ্রামের শফিকুল ইসলামের কন্যা বেবী আকতারের সাথে গত ২০০৭ সালের শেষ দিকে ১ লক্ষ ১ টাকা দেন মহর ধার্য্য করে পাতাড়ী গ্রামের ইদ্রীশ আলীর পুত্র হোসাইনের বিয়ে হয়। তাদের সংসার জীবন চলাকালে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এমতাবস্থায় হোসাইন যৌতুক হিসেবে ১লক্ষ টাকা বাবার বাড়ী থেকে নিয়ে আসার জন্য গ্রহবধুকে চাপ দিতে থাকে।

দরীদ্র পিতার পক্ষে বিপুল পরিমানের ওই টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় তাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয়। নিরুপায় হয়ে ওই গৃহবধু নওগাঁ-৩ নং আমলী আদালতে স্বামী হোসাইনের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় চতুর হোসাইন মামলা থেকে বাঁচতে পরিকল্পিত ভাবে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় স্ত্রী বেবী আকতার কে নিজ সংসারে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

যৌতুক নিরোধ আইনে তার বিরুদ্ধে স্ত্রী বেবী আকতারের দায়ের করা মামলাটি প্রত্যহার করিয়ে নেয়। ওই মামলা প্রত্যাহার করার কিছু দিনের মধ্যে আবার পুর্বের ন্যায় যৌতুকের দাবীকৃত ১লক্ষ টাকার জন্য জোর জুলুম শুরু করে। দাবীকৃত ওই টাকা দিতে না পারায় ঘটনার দিন গত ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর রোজ শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে শ্বশুর, শাশুড়ী ও স্বামী মিলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার জন্য নাক মুখে বালিস চেপে ধরে ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর জখম করে ঘরে ফেলে রাখে।

এ অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনা গোপনে মোবাইলে বাবার বাড়ীতে জানানো হয়। সংবাদ পেয়ে নির্যাতনের শিকার গৃহবধুর বড় ভাই বাবুল ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আহত ছোট বোন বেবীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে ভগ্নিপতি হোসাইন তাকে চরম ভাবে অপমান অপদস্ত করে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। নিরুপায় হয়ে পরদিন ওই গৃহবধুর পিতা শফিকুল ইসলাম মাননীয় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এর নির্দেশক্রমে সাপাহার থানা পুলিশ আহত বেবী আকতার কে স্বামীর বাড়ী থেকে উদ্ধার করে পিতার নিকট পৌছে দেয়। এ ঘটনায় নির্যাতিত গৃহবধু বেবী আকতার বাদী হয়ে স্বামী হোসাইন, শশুর ইদ্রীশ আলী ও শাশুড়ী মাবিয়া বেগমের বিরুদ্ধে নওগাঁ জেলা জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পিটিশন মামলা (নং ৬৫২/২০১৩) দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত ওই মামলার শুনানী অন্তে বাদীনির অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান পুর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন।

তিনি আদালতের নির্দেশ ক্রমে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি নিজ দপ্তরে বসে অভিযোগের তদন্ত সম্পুর্ন করেন। ওই মামলা থেকে নির্যাতনকারী হোসাইন কে বাচাঁনোর জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল জোর তৎপরতা শুরু করে। তদন্তকালে একটি ভূয়া শালিস নামা ওই তদন্ত কর্মকর্তার নিকট দাখিল করা হয়।

বাদীনির পিতা শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন যে, ওই শালিস নামায় বাদীনি বেবী আকতার ও তার কোন স্বাক্ষর না থাকলেও প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা তা সত্য হিসেবে আমলে নিয়ে কোন প্রকার স্বাক্ষ প্রমান ছাড়ায় এক তরফা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরী করে তা বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। দাখিলকৃত ওই প্রতিবেদনে বাদীনির অভিযোগের প্রাথমিক কোন সত্যতা না থাকায় ন্যায় বিচারের আশায় বাদীনি বিজ্ঞ আদালতে দাখিলকৃত ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে একটি নারাজী দরখাস্ত দাখিল করেন।

ওই নারাজী আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত বিবেচনাক্রমে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আশড়ন্দ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন। এ দিকে তিনি ব্যক্তিগত কারনে ওই মামলার অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল হতে অব্যহতি প্রার্থনা করায় বিজ্ঞ আদালত অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের দায় হতে তাকেও অব্যাহতি প্রদান করেন।

সর্বশেষ ওই মামলার তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য স্থানীয় তিলন সরলী দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডের প্রতি বিজ্ঞ আদালত নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ওই মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ফিরোজ কবির গত ১৯ সে ফেব্র“য়ারী তিলনী সরলী মাদ্রাসায় ওই মামলার বাদীনি ও বিবাদীগণ সহ উভয়ের এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রক্রিয়া সমাপ্ত করেন। বাদীনির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে এবারেও প্রতিপক্ষের ওই প্রভাবশালী মহল প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে বিবাদীদের বাঁচাতে তদন্ত কার্যক্রমে বিভ্রান্ত সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে।

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মাওলানা ফিরোজ কবির জানান বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ন্যায় বিচারের স্বার্থে তিনি অত্যান্ত নিরপেক্ষতার সাথে ওই মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে যথা সময়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই