স্ত্রী-পুত্রকে কুপিয়ে স্বর্ণালংকার-নগদ টাকা লুট
সাতক্ষীরা শহরে ফের ডাকাতি॥ পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন
ফের সাতক্ষীরা শহরে এক ব্যাংকারের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। এ সময় ডাকাতরা ওই ব্যাংকারের স্ত্রী-পুত্রকে কুপিয়ে ১০ ভরি স্বর্ণের অলংকার ও নগদ ৪০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শহরের রাজার বাগান কলেজ রোডস্থ সরকারপাড়ায় ব্যাংকার আব্দুল হাকিমের বাড়িতে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
ব্যাংকার আব্দুল হাকিম জানান, রাতে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল পিস্তল ও রাম দাঁসহ বিভিন্ন অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গ্রিল কেটে তার বাড়িতে প্রবেশ করে। গুলি করার ভয় দেখিয়ে দরজা খুলে দিতে বললে গৃহকর্তা হাকিম দরজা খুলে দেন। পরে টাকা ও স্বর্ণ অলংকার লুট করতে থাকলে তার স্ত্রী ফিরোজা ও ছেলে সুমন বাধা দিতে যায়। এ সময় তাদের দু’জনকে কুপিয়ে জখম করে ১০ ভরি স্বর্ণের অলংকার ও নগদ ৪০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। পরে আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রহমান জানান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় সাতক্ষীরা শহরে রাম দা বাহিনীর আতংক বিরাজ করছে। প্রতিদিন কোন না কোন বাড়িতে হানা দিচ্ছে রাম দাসহ দেশীয় অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত ডাকাতেরা। বাদ যায়নি ইংরেজি নববর্ষের প্রথম প্রহরও। শহরের কাটিয়া সরকারপাড়ায় ইংরেজি নববর্ষের (১ জানুয়ারি) প্রথম প্রহরেই ৫ বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ৪টি বাড়িতে ঢুকতে ব্যর্থ হলেও একটি বাড়ি থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা লুট করেছে তারা।
এ ঘটনাসহ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস জুড়ে জেলা শহরে কমপক্ষে ১৩টি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় জনমনে রীতিমত ডাকাতি আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কাটিয়া সরকারপাড়ার শিক্ষক দীপক রায় জানান, দেশীয় অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত ১০/১৫ জনের ডাকাত দল বুধবার মধ্যরাতে তার বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে লুটপাট শুরু করে তারা। তবে বাড়িতে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিস না থাকায় নগদ দশ হাজার টাকাসহ ব্যবহারিক কিছু জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।
এদিকে, স্থানীয়রা জানান, প্রায় একই সময়ে একই এলাকার অধ্যাপক মোদাচ্ছেরুল হক হুদা, সঞ্জয় সরকার, আশরাফুল হক ও শিক্ষক অমল কুমার রাহার বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়। তারা তালা ভেঙ্গে ঘরের মধ্যে প্রবেশও করে। তবে পরিবারের লোকজন জেগে থাকায় তাদের চিৎকার চেচামেচিতে সুবিধা করতে না পারায় ডাকাতরা ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
স্থানীয় একজন শিক্ষক বলেন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের অদূরেই একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত বিশ দিনে কমপক্ষে ১২টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এরপরও পুলিশের রহস্যজনক নীরবতায় এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছে।
এছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর ভোর রাত পৌনে ৩টায় সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিকের বাড়ি থেকে নগদ ৩ লক্ষ টাকা ও প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণাংলকার লুট করে নিয়ে যায় অস্ত্রধারী ডাকাতরা।
গত ১১ ডিসেম্বর গভীর রাতে শহরের কাটিয়া রেজিস্ট্রি অফিস পাড়ার ডা. অরুন ব্যানার্জীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় সশস্ত্র ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে পরিবারের সবাইকে জিম্মি করে নগদ ৭০ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণের অলংকার, একটি ক্যামেরা ও একটি মোবাইল সেটসহ প্রায় ০৬ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এর মাত্র একদিন আগে ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে শহরের কাটিয়া সরকার পাড়া এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলমের বাড়ি থেকেও ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। এছাড়াও সম্প্রতি একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
সার্বিক বিষয়ে জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১৪ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করেছে। রাতে পুলিশী টহল বাড়ানো হবে। যে কোন মুল্যে শহর থেকে ডাকাতির ঘটনা প্রতিহত করা হবে।
মন্তব্য চালু নেই