সাতক্ষীরায় পথের ধারে শীতের পিঠা
সাতক্ষীরায় দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের পিঠা খাওয়ার জন্য শহরের মোড়ে মোড়ে জমে উঠেছে পিঠার দোকান। আর এসব দোকানে অফিসগামী কিংবা বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দেখা যায় পিঠা খেতে। একই সাথে শহরবাসীর রসনার তৃপ্তি মেটাতে গিয়ে অহসায় দুস্থ শ্রেণির ব্যবসায়ীদের উপার্জন হচ্ছে। বারো মাসে তেরো পার্বণের বাংলাদেশে এখন শীতকাল। একেক পার্বণকে ঘিরে যেমন নানান আয়োজন করা হয় বাঙালির ঘরে ঘরে, তেমনি এ শীতের কুয়াশা ভেজা সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠা আর পুলির আয়োজন করা হয়। নাগরিক ব্যস্ততা আর যান্ত্রিক সভ্যতার কারণে এখন আর যেমন বারো মাসে তেরো পার্বণ হয় না, তেমনি ইচ্ছে থাকলেও এখন আর মানুষ ঘরে বানানো পিঠা খেতে পারছে না। আর শহরবাসীর এই শীতকালীন রসনা বিলাসে তাই শহরের মোড়ে মোড়ে জমে ওঠা বাহারি পিঠার দোকানই ভরসা। যা তাদের জীবনযাপনে সাহায্য করে। শুধু যে কর্মজীবী মানুষরাই এই পিঠা খেয়ে থাকেন, তা কিন্তু নয়। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তার ধারের পিঠার দোকানের উপর নিভর্রশীল হয়ে উঠছে। তাইতো গাড়ি থামিয়ে রাস্তা থেকে ভাপা কিংবা চিতই পিঠা কিনতেও দেখা যায় অনেককে। আবার কেউ কেউ কর্মস্থল শেষ করে ফিরতি পথে পরিবারের সদস্যদের জন্যও পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন।
শহরের মুনজিতপুর থেকে আসা পিঠা ক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রী নূরজাহান বাজারের পিঠা খেতে ভালোবাসেন। তাই তিনি ভাপা পিঠা প্রায়ই কেনেন। তাছাড়া বাড়িতে এখন পিঠা তৈরি করা সম্ভব হয় না। পথের ধারের পিঠাই ভরসা। সুলতানপুর এলাকার পিঠা ক্রেতা মোছাঃ রোকেয়া খাতুন জানান, তার বাড়িতে সবায় পিঠা খেতে ভালোবাসেন। তাই তিনি স্কুল থেকে বাসার যাওয়ার পথে বাড়ির সবার পছন্দের ভাপা পিঠা নিয়ে যান। রসুলপুর থেকে আসা ক্রেতা শারমিন সুলতানা ও তার বোন পারভীন বলেন, পথের ধারে শীতের পিঠা ভালই লাগে। পাশাপাশি বাচ্চাদের আবদার মেটাতেও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পিঠা।
১২ বছরের বেশী সময় ধরে পথের ধারে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন শহরের রেজিস্ট্রি অফিস পাড়া’র মজিদ আলী’র স্ত্রী রাশিদা খাতুন (৩২)। তিনি প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত শহরের পাকাপোলের পশ্বিম পাশে জেলা ভূমি অফিসের সামনে এসব পিঠা বিক্রি করে স্বাবলম্বী। বিগত ৮ বছর আগে থেকে তার স্বামী মজিদ আলী ১ সন্তান ও স্ত্রী রাশিদাকে ফেলে রেখে এখনও পর্যন্ত নিরুদ্দেশ। বর্তমানে ১ ছেলে ও তার অসুস্থ মা’কে নিয়ে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। পিঠা বিক্রেতা রাশিদা খাতুন দৈনিক কাফেলার স্টাফ রিপোর্টার আব্দুর রহমানকে বলেন, ‘নারিকেল কুরি ও আখের পাটালি বা খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভাপা পিঠা। দামও বেশ হাতের নাগালেই। প্রতিটি ভাপা পিঠা’র মূল্য ৫ টাকা। প্রতিদিন ২ শতাধিক পিঠা বিক্রি করেন তিনি। এতে প্রতিদিন তার ৩০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। এছাড়া তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা অর্ডার অনুয়ারি ভাপা পিঠা, চিতা পিঠা, কুলি পিঠা, পাটিশাপ্টা পিঠা, পাকান পিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করেন।’
মন্তব্য চালু নেই