সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে গুলিতে ৫বাংলাদেশি নিহত
সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে গুলিতে ৫বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। পাচারকারী চক্রের গুলিতে তারা নিহত হয় বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ৪০জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে দেড় শতাধিক। তিন শতাধিক যাত্রীসহ বিকল ট্রলারটিকে বঙ্গোপসাগর থেকে কোস্টগার্ডের সদস্যরা উদ্ধার করেছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৩জন। ৩বিদেশী নাগরিক আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে পরিচয় পাওয়া নিহতরা হলো- যশোর জেলার হরিরামপুরের সেলিম ও রুবেল, বগুরার কাহালুকার সাইফুল ও সিরাজগঞ্জের মনির। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নরসিংদির শিবপুরের কামাল নামের এক ব্যক্তি আটক হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনায় সাড়ে ৩শ যাত্রী নিয়ে ওই ট্রলার আটকা পড়ে। পরে কোস্টগার্ডের উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিকল ট্রলারসহ নিহত ও গুলিবিদ্ধ যাত্রীদের উদ্ধার করে।
এদিকে এর আগে বিভিন্ন সূত্র জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ সংলগ্ন সাগরে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) গুলিতে পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হয়।
ওই ট্রলারের যাত্রী মিঠুন সাহা মুঠোফোনে বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের বঙ্গোপসাগরে পথে ৩শ যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার মালয়েশিয়ায় যাচ্ছিল। পথে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যদের বাধার মুখে চিতা পাহাড়ের কাছে ট্রলারটি আটকা পড়ে। এসময় বিজিপি সদস্যরা ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি করে।’
বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেখানে বিজিপি সদস্যরা থেমে থেমে গুলি চালাচ্ছে বলে মুঠোফোনে জানান তিনি।
টেকনাফ কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট হারুনুর রশীদ জানিয়েছিলেন, মুঠোফোনে ট্রলার থেকে একজন এ সংবাদ জানিয়েছে। তবে ওই ব্যক্তি হতাহতে খবর জানাতে পারেননি।
কোস্টগার্ড সদস্যরা রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই ৩শতাধিক যাত্রীসহ ট্রলারটি উদ্ধার করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌছেছে বলে জানা গেছে।
## বিকল জাহাজ নিয়ে ফিরেছে কোস্টগার্ড
সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় বঙ্গোপসাগরে গুলিবর্ষণের ঘটনায় আটকা পড়া জাহাজটি যাত্রীসহ উদ্ধার করে নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিয়ে এসেছে কোস্টগার্ড। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা সেখানে পৌছায়।
এর আগে বুধবার দুপুরে সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে প্রায় ১০/১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার সাগরে ওই ঘটনাস্থলে পৌঁছে কোস্টগার্ডের উদ্ধারকারী টিম।
বিকেলে তারা বিকল জাহাজ ও যাত্রীদের নিয়ে সেন্টমার্টিনের দিকে রওনা দেয়। এ ঘটনায় সীমান্তের মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানায়, বিজিপির গুলিতে অন্তত পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ পাঁচজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করে আনা হচ্ছে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি জলসীমায় অবস্থান করা তিনশ’ যাত্রী নিয়ে মালয়েশিয়াগামী ট্রলারে গুলিতে নিহত হয় ৫বাংলাদেশি।
তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, দালালচক্রের সদস্যরা অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার লক্ষ্যে ট্রলারে থাকা যাত্রীদের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রলারে অবস্থানরত দালালচক্রের দু’গ্রুপের গোলাগুলিতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
## ২০ জনে গুলি খাইয়া পইড়া আছে, আমাগো বাঁচান
‘ভাইরে, দুইটা জাহাজ দেখতে পাইছি। জাহাজ দুটি আমাদের দিকে আগাইয়া আইতেছে। ভাই, ২০ জন লোক গুলি খাইয়া পড়ে আছে। পাঁচজন মইরা গেছে। আমরা সবাই অনেক ভয় পাইতেছি, আমাগো বাঁচান।’
বুধবার দুপুর ২টায় ঘটনাস্থল থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোবাইল ফোনে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন আক্রান্ত ট্রলারের যাত্রী মিঠুন দাস। মিঠুন দাসের মোবাইল কলের সূত্রধরে তার পরিবারের সদস্যরা জানান, সাড়ে তিনশ’ যাত্রী নিয়ে বড় আকারের ট্রলারটি গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কক্সবাজার থেকে রওনা হয়। মিঠুনসহ যাত্রীরা সবাই অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ট্রলারটি সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়িয়ে আরো ১০/১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি চিতা পাহাড়ের জলসীমা দিয়ে যাওয়ার সময় সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে অনবরত গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ ২০ জনের অবস্থাও বেশি ভালো না।
মিঠুন মোবাইল ফোনে আরো জানিয়েছেন, যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তারা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। কারো গুলি লেগেছে পেটে, কারো হাতে, বুকে কিংবা পায়ে। আর যাদের মাথায় গুলি লেগেছে তারা ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। নিহতদের পরিচয় ও বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করলেও আতঙ্কে তার কথা বন্ধ হয়ে আসছিল।
শেষ খবরে নরসিংদীর ছেলে মিঠুন আরো জানান, দুপুরের পরে নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং বিকল হয়ে পড়ায় ট্রলারটি বেঁধে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসছে।
মন্তব্য চালু নেই