সাক্ষীর বয়ান: যেভাবে হলো শাকিব-অপুর বিয়ে

শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিয়ে হয় ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল। আজ তাঁদের নবম বিবাহবার্ষিকী। এই দম্পতিকে ঘিরে গত কয়েকটি দিনে হয়ে গেছে অনেক কিছু। নবম বিবাহবার্ষিকীতে শাকিব পাবনায় ‘রংবাজ’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত, আর অপু ঢাকার বাসায়। তাঁদের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজনা ব্যবস্থাপক মামুনুজ্জামান মামুন। তাঁর বয়ানে শোনা যাক কীভাবে হলো শাকিব-অপুর বিয়ে।

ডিপজল ভাইয়ের প্রযোজনায় ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবি থেকেই শাকিব ভাই ও অপু দিদির মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন আমি ওই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রযোজনা ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতাম। একসময় জানতে পারলাম, আমার জেলা ফরিদপুরেই শাকিবের বাড়ি। তখন থেকেই আমার সঙ্গে শাকিব-অপুর ভালো সম্পর্ক হয়ে গেল। দুজনই আমাকে ভাইয়ের মতো দেখেন।

‘চাচ্চু’ ছবির শুটিংয়ের কথা। তত দিনে তাঁদের (শাকিব-অপু) মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে একদিন সিদ্ধান্ত হলো, অপু আর অভিনয় করবেন না। ভারতে গিয়ে পড়ালেখা শেষ করবেন। তারপর দুজনের বিয়ে হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অপু দিদি ভারতে চলেও গেলেন। বেশ কিছুদিন পর হঠাৎ করেই রাজ্জাক সাহেবের পরিচালনায় একটি ছবিতে সম্রাটের বিপরীতে কাজ করার জন্য ভারত থেকে চলে এলেন অপু দিদি। রাজ্জাক সাহেবের ছবিতে অভিনয় করবেন দিদি, এটা আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু শাকিব ভাইকে না জানিয়ে ছবিতে কাজ করার কারণে অভিমান করে দিদির সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিলেন ভাই। এরপর শাহিন-সুমনের ‘এক বুক জ্বালা’ ছবিতে দিদিকে বাদ দিয়ে শুভেচ্ছার সঙ্গে জুটি করলেন শাকিব। তত দিনে আমি হার্টবিট প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রযোজক তাপসী ঠাকুর ম্যাডাম আমাকে বললেন, ‘অপু-শাকিবকে নিয়ে একটা ছবি বানাতে চাই। ছবির নাম “মনে প্রাণে আছো তুমি”। তোমার সঙ্গে তাঁদের ভালো সম্পর্ক, তুমি ব্যবস্থা করো।’ কিন্তু তত দিনেও শাকিবের অভিমান ভাঙেনি। তাই শাকিব ভাই দিদির সঙ্গে কাজ করতে চাইলেন না। কিন্তু তাপসী ঠাকুর অপু ছাড়া ছবি বানাবেন না। পরে আমি অনেক বুঝিয়ে তাঁদের দুজনকে রাজি করালাম। ছবির শুটিং চলার সময়ই তাঁদের মান-অভিমান ভেঙে গেল। ওই ছবির শুটিং চলা অবস্থাতেই শাকিব-অপু বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তখন মিরপুর শাহ আলী মাজার রোডের একটি বাসায় থাকতেন অপু দিদি। হঠাৎ করেই একদিন শাকিব ভাই তাঁর কালো রঙের গাড়িতে করে আমাকে সেখানে নিয়ে গেলেন। সেখানেই তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। পরে দুজন বিষয়টি আমাকে জানালেন এবং কাজি ডাকতে বললেন। আমি শাকিব ভাইকে বললাম, বিয়ে তো অনেক বড় ব্যাপার, ভেবেচিন্তে কাজটি করেন। দিদিকেও একই কথা বললাম। কিন্তু দুজনেই সিদ্ধান্তে অটল। তাঁরা বললেন, ‘বিয়ের সংবাদ গোপন থাকবে। একসময় বড় অনুষ্ঠান করে সবাইকে জানাব আমরা।’

বিয়ের পুরো বিষয়টি তখন কেবল অপুর মেজ বোন লতা ও শাকিবের চাচাতো ভাই মনির জানতেন। যা–ই হোক, লতাও আমাকে বললেন, ‘তারা যখন চাইছে, তখন আপনি কাজি ডাকেন।’

আমি এর মধ্যে ফরিদপুরে শাকিব ভাইয়ের বাড়ির কাছ থেকে মজিবুর রহমান নামের এক কাজি সাহেবকে নিয়ে আসি। তাঁরা সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন ভেবে কাজি সাহেবকে ঢাকায় এনে দুই দিন গোপন করে রাখলাম! দেরি দেখে অপু আমাকে বললেন, ‘কাজি আনছেন না কেন? শাকিব কি আমাকে বিয়ে করতে চাইছে না?’ আবার শাকিব ভাইয়েরও একই জিজ্ঞাসা, ‘অপু কি আমাকে বিয়ে করতে চাইছে না?’

পরে বাধ্য হয়ে আমি তাঁদের বিয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। বিয়ের আগের দিন শাকিব ভাই অপু দিদির জন্য একটি হীরার সেট ও একটি লেহেঙ্গা কিনেছিলেন। শাকিব ভাই এখন যে বাসায় থাকেন, ওই বাসায় বিয়ের ব্যবস্থা করা হলো। আসরের নামাজের ঠিক আগে আগে বিয়ে পড়ানোর সিদ্ধান্ত হলো। আমি কাজি সাহেবকে নিয়ে গেলাম। এরই মধ্যে অপু দিদি ও তাঁর বোন লতা এসে হাজির হলেন। বিয়ের সময় আমি অপু দিদির উকিল বাবা হিসেবে কাবিননামায় স্বাক্ষর করি। লতাও অপুর পক্ষে স্বাক্ষর করেন। আর শাকিব ভাইয়ের চাচাতো ভাই মনির স্বাক্ষর করেন তাঁর পক্ষে। বিয়ের দেনমোহরটা বড় অঙ্কেরই হয়েছিল। অঙ্কটা না হয় না-ই বললাম। তবে ওই সময় অপু দিদি বলেছিলেন, ‘দেনমোহর দিয়ে কী হবে, সংসারটাই বড়।’ বিয়ের ঘণ্টা দুয়েক পর অপু ও লতা তাঁদের বাড়িতে চলে যান।

ওই দিন রাতেই দুই পরিবারের লোকজন বিয়ের খবর জেনে যান। জানার পর শাকিব ও অপুর পরিবারের বাকি সদস্যরা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। শাকিব ভাই ও অপু দিদির বাবা-মা বিষয়টি মানতে চাননি। পরে আমি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাঁদের বুঝিয়েছি। এভাবে মাস তিনেক গেছে। পরে অপু দিদি শাকিব ভাইয়ের বাসায় আসা-যাওয়া শুরু করেন। এভাবেই দুই পরিবার মিলে যায়। এরপর থেকে শুটিং না থাকলে অপু সন্তানসম্ভবা হওয়ার আগ পর্যন্ত শাকিব ভাইয়ের বাড়িতে নিয়মিত থাকতেন। অন্যদিকে, শাকিব ভাইও অপুর বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন।খবর প্রথম আলো’র।



মন্তব্য চালু নেই