আনন্দবাজারের প্রতিবেদন

সাঈদীর সাজা হ্রাসে ঘরে-বাইরে স্বস্তি পাবে আ.লীগ

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে সরকারকে অস্বস্তি থেকে বাঁচালো সুপ্রিম কোর্ট। এ রায়ে আওয়ামী লীগ সরকার ঘরে-বাইরে স্বস্তি পাবে।

বৃহস্পতিবার কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। সাঈদীর আপিলের রায় নিয়ে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাব্শালী এ পত্রিকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রাণদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। একাত্তরে খুন, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুঠপাট ও ধর্মান্তরের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাইদিকে প্রাণদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিলেন জামায়াতের এই নায়েবে আমির। সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায়ে সেই সাজা বদল করলো।

সরকার এই রায়কে সর্বোচ্চ আদালতের স্বাধীন মতামত বলে ঘোষণা করেছে। রায় ঘোষণার পরে দুপুরেই ১৪ দল বৈঠকে বসে। পরিস্থিতি পর্য়ালোচনার পরে রায়কে স্বাগত জানান তারা। কিন্তু সাঈদীর ফাঁসির দাবিতে কাল থেকে ঢাকার শাহবাগ চত্বরে অবস্থান শুরু করা গণজাগরণ মঞ্চের সদস্যরা এই রায়কে ‘সরকার-মৌলবাদী আঁতাতের রায়’ বলে বর্ণনা করেছেন।

তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ সরকারকে দোষারোপ না-করে ব্যর্থতার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরকে দায়ী করেছেন। কমিটির আহ্বায়ক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ আদালতে সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় যেসব আইনজীবী আপ্রাণ পরিশ্রম করে জয় আদায় করেছিলেন, আপিল মামলায় তাঁদের ডাকা তো দূরের কথা, পরামর্শটুকু নেয়নি এজি অফিস। অথচ আন্তর্জাতিক আইনকানুনে সরকারি আইনজীবীরা আদৌ অভ্যস্থ নন। তার ফলেই সাঈদীর মতো একজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ফাঁসি থেকে পার পেয়ে গেল।’

মৃত্যুদণ্ড মওকুফের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা হিসেবে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার সরকার এই রায়ে ঘরে-বাইরে বেশ খানিকটা স্বস্তিতেই থাকবে। ধর্মীয় নেতা হিসেবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সমর্থন জামায়াতে ইসলামীর চৌহদ্দি ছাড়িয়ে অন্য দলের মানুষের মধ্যেও কম নেই। তার ফাঁসি অনেকেই হয়তো মেনে নিতে পারতেন না।

এতে আরো বলা হয়, যৌথবাহিনীর একের পর এক অভিযানে জামায়াতের সংগঠন এখন অনেকটাই কোণঠাসা। সুপ্রিম কোর্ট সাঈদীর ফাঁসির রায় বহাল রাখলে নাশকতার মাধ্যমে তারা ফের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেত।

আন্তর্জাতিক মহলেও জামায়াত নেতাদের ফাঁসির বিরুদ্ধে একটা জনমত গড়ে উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা ও কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ধর্মীয় নেতাদের ফাঁসির বিরোধিতা করেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ইইউ। সরকারের এক কর্তার কথায় এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট যে সরকারকে অস্বস্তি থেকে বাঁচাল, শেখ হাসিনা তার জন্য বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন।



মন্তব্য চালু নেই