সাইবার ক্রাইম দমনে কাজে আসবে বায়োমেট্রিক সিম রেজিস্ট্রেশন

দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে সাইবার ক্রাইমও। প্রতিদিন হাজারো মানুষ সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। চলমান সাইবার ক্রাইমের এমন হাজারো চিত্র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে বাড়ছে “সাইবার অপরাধ”। উন্নত বিশ্বে সাইবার অপরাধের ভয়াবহতায় অপরাধের তালিকায় শীর্ষে স্থান দেয়া হলেও বাংলাদেশে তা এখনো পরিলক্ষিত হয়নি। তবে দেশে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ইন্টারনেটের প্রসারের সঙ্গে সাইবার অপরাধের ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর আগে প্রণীত তথ্য প্রযুক্তি আইনে অপরাধ দমনের ধারা থাকলেও তা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ওই আইনের ৫৭ ধারাকে মুক্ত চিন্তার অন্তরায় হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিও উঠেছে। তাই সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করতে যাচ্ছে তা সাইবার অপরাধ দমনে কার্যকরি ভূমিকা রাখবে।

স্পেশালাইজড কোন বাহিনী না থাকলেও পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত সংস্থা (সিআইডি) সাইবার ক্রাইম দমনে কাজ করছে। যদিও ক্ষুদ্র পরিসরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি), ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) একটি ও র‌্যাবের একটি ইউনিট সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ ও অপরাধী শনাক্তে কাজ করছে। তবে সিআইডি ব্যতীত এক্সপার্ট অপিনিয়ন অন্য কোনো সংস্থা দিতে পারে না।

সিআইডির মতে, দেশে সাইবার অপরাধ সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা নেই। জেনে না জেনে অনেকেই অপরাধে জড়াচ্ছেন। এছাড়া সাইবার অপরাধের মামলা দায়েরের পর প্রাথমিকভাবে তদন্তভার পওয়া থানা পুলিশেরও এ সম্পর্কে ভাল ধারণা নেই। যে কারণে অপরাধ ও অপরাধী কোনটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে সিআইডি বলছে, সম্প্রতি সরকার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যা অপরাধীদের সনাক্তকরণে ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। শুধু তাই নয়, ‘আইসিটি অ্যাক্ট’ এর নতুন আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। যেখানে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। এছাড়া অপরাধের ধরন অনুযায়ী সর্বনিম্ন শাস্তিও নির্ধারণ করা হচ্ছে। আইসিটি অ্যাক্ট থেকে ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ ধারা বাতিল করে এই আইনের আওতায় আসছে। এতে অপরাধীরা আর পার পাবে না।

তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ অনুযায়ী পর্নোগ্রাফী, হ্যাকিং, স্প্যাম, বোমাবাজি, অ্যাকশান গেম সাইবার অপরাধে পড়বে। এছাড়া মোবাইলফোনে হুমকি, ফেইসবুকে ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলে নগ্ন ছবি পোস্ট ও হত্যার হুমকি, এমএমএস ভিডিও সামাজিম মাধ্যমগুলোতে ফাঁস, সংশ্লিষ্টদের অনুমতি ছাড়া ওয়েবসাইটের তথ্য নেয়া, কন্টেন্ট এডিট করা, দেশীয় সাইট ডিফেস দেয়া, ক্রেডিট কার্ড চুরি সাইবার অপরাধের অন্তর্ভুক্ত।

এব্যাপারে যোগাযোগ সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এএসপি নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ অপরাধীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখে। তাদের সনাক্তের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ করা হলেও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের কারণে দেশীয় অপরাধীদের সনাক্ত করা সহজ হবে। কারণ সরকারের কাছে ইউজারের সব ধরণের তথ্যই থাকছে।

তিনি আরো বলেন, কোন সিম অনিবন্ধিত থাকছে না। হত্যার হুমকি, চাঁদা দাবিসহ মোবাইলফোন কেন্দ্রিক সাইবার অপরাধীদের সনাক্ত করা আরও সহজ হবে। অনেকে মোবাইল নাম্বার দিয়ে ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। এমন অপরাধী ইউজারকেও ধরা সহজ হবে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এসপি আহসান হাবিব পলাশ বলেন, বায়োমেট্রিক সিম ব্যবহারকারীরা আর আগের মতো অপরাধ কর্মে জড়াতে পারবে না। অভিযোগ আসা মাত্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।

র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাইবার অপরাধ দমনে অবশ্যই বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন পদ্ধতি কার্যকরি ভূমিকা রাখবে। এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব যে প্রক্রিয়ায় অপরাধীদের সনাক্ত করে তা আরও সহজ হবে।জাগোনিউজ



মন্তব্য চালু নেই