সহায়তার জন্য রাস্তায় রাস্তায় রোহিঙ্গারা

আর্থিক সহায়তা পাবার আশায় টেকনাফ-কক্সবাজার প্রধান সড়কের পাশে রাত-দিন বসে থাকছে শত শত রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ। সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর বর্বরতায় এসব রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এপার পৌঁছে। কিন্তু খাদ্যাভাব এবং উপার্জনের পথ না থাকায় ত্রাণের আশায় রাস্তায় বসে থাকছেন তারা। এসময় অনেকে ট্রাক, টমটম, মাইক্রোবাস থেকে কিংবা অনেকে তাদের কাছে গিয়ে নগদ টাকা, চিড়া, চাল, শীতের কাপড় বিতরণ করছেন।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মংডু বড়া সিকদার পাড়ার জমিলা খাতুন, বড় গওজি বিলের ছেনোয়ারা বেগম, বলি বাজারের ছৈয়দ উল্লাহ, কেয়ারী প্রাং এলাকার হাসিনার সঙ্গে কথা হয়। এদের মধ্যে হাসিনা বলেন, ভোর থেকে কিছু পাওয়ার আশায় বসে আছি। কিন্তু এদিকে কেউ আসল না। একটু দূরে একজন এসে জনপ্রতি ১৫০ টাকা দিয়ে সটকে পড়ে। আমরা ওখানে গিয়ে তাকে পাইনি। তাই টাকাও পাইনি।

ছেনোয়ারা বলেন, সকাল থেকে বসে আছি, এক লোক এসে ১৫০ টাকা দিয়েছে। গোটা দিন বসে থেকে আর একটি টাকাও পাইনি। টাকা পেলে কী হবে? অপরিচিত লোকজন এসে ওখান থেকে ধমক দিয়ে টাকার ভাগ নিয়ে গেল। আমরাতো নতুন তাই কিছু করতে পারি না। পুরাতন রোহিঙ্গারা আমাদের পাওয়া টাকায় ভাগ বসাচ্ছে।

নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরের ‘বি’ ব্লকে থাকেন বলি বাজারের ১০ বছর বয়সী ছৈয়দ উল্লাহ। সে বলে, মা অসুস্থ তাই বাধ্য হয়ে সকাল থেকে রাস্তায় এসে বসে আছি। তবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো টাকা পাইনি।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সফিউল আলম বলেন, রাস্তায় বেশকিছু লোকজনকে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। এরা রোহিঙ্গা কী না বলতে পারব না। তবে কোনো রোহিঙ্গা যাতে রাস্তায় অবস্থান নিতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

কুতুপালং ও লেদাতে দেওয়া হচ্ছে চাল ও তৈজসপত্র
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে সীমিত আকারে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে আইওএম ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম। সংস্থা দুটি সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে গৃহস্থালি জিনিসপত্র, চাল ও শিশুদের খাদ্য বিতরণ শুরু করেছে কৌশলে। কোথাও ব্যানার না টাঙিয়ে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের সভাপতি আবু ছৈয়দ জানান, বুধবার পর্যন্ত কুতুপালং এলাকায় নতুন আসা রোহিঙ্গা পরিবারের সংখ্যা হচ্ছে ৫ হাজার ৭৭২। এর মধ্যে প্রায় এক সপ্তাহ আগে ২৩৫০ পরিবার ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম হতে চাল পেয়েছেন। আইওএম দিয়েছে গৃহস্থালি জিনিসপত্র ও কম্বল। অন্যান্য পরিবারগুলো এখনও কিছু পায়নি। উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় ২৩৫০ পরিবারকে চাল দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য বখতিয়ার উদ্দিন।

অপরদিকে টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের সভাপতি ডা. দুদু মিয়া বলেন, বর্তমানে এখানে হাজার খানেক পরিবার রয়েছে। আইওএম ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম এখানে আসা এসব রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে ২৫ কেজি চাল ও তৈজসপত্র, কম্বল ইত্যাদি বিতরণ করেছে। যা পর্যাপ্ত নয়।

আইওএম জাতীয় প্রোগ্রাম অফিসার সৈকত বিশ্বাস বলেন, আর্ন্তজাতিক অভিবাসন নিয়ে কাজ করছে আইওএম। মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে আসা এসব রোহিঙ্গাদের মানবিক বিষয়টি বিবেচনা করে কর্মকাণ্ড চলছে। বাংলাদেশ সরকারের নীতি মেনেই সংস্থাটি কাজ করছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

গ্রাম ও শহরে ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা
টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের সভাপতি ডা. দুদু মিয়া বলেন, এখানে প্রথমদিকে সাড়ে ১৩’শ পরিবার ছিল। কিছু পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। বর্তমানে এখানে হাজার খানেক পরিবার রয়েছে।

টেকনাফের হ্নীলা ইউপি সদস্য নুরুল হুদা বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে পর্যাপ্ত ত্রাণ সাহায্য না পাওয়ায় ক্যাম্প ছেড়ে অনেকে গ্রামে বা শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর্ন্তজাতিক সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, এ পর্যন্ত ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু তার কোনো নিয়ন্ত্রণ বা সঠিক পরিসংখ্যান বাংলাদেশ সরকারের কাছে আছে বলে মনে হয় না। এসব রোহিঙ্গা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরবর্তী সময়ে মিযানমারে কীভাবে ফেরত পাঠাবে তা বোঝা যাচ্ছে না।



মন্তব্য চালু নেই