সহায়ক সরকার: একাধিক বিকল্প থাকবে বিএনপির রূপরেখায়

একাধিক বিকল্প প্রস্তাব রেখেই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, তাঁদের প্রস্তাবিত ওই সরকারের মূল ভিত্তি হবে দলনিরপেক্ষতা। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বরে দলটি নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল মূলত সরকারের মনোভাব বোঝার জন্য। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বিষয়টি সরকার আমলে নেয়নি। তারপরও তাঁরা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা দিয়ে সরকারকে আলোচনার আহ্বান জানাবেন। এর মাধ্যমে দলটি এই বার্তা দিতে চায় যে, বিএনপি ইতিবাচক রাজনীতি চায়।খবর প্রথম আলো’র।

তবে বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, সরকার শেষ পর্যন্ত বিএনপির এই প্রস্তাবও আমলে নেবে না। তারপরও প্রস্তাবটি দিলে এর পক্ষে জনমত গঠন করে আন্দোলনের একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করতে পারবে বিএনপি।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁরা এই রূপরেখা তুলে ধরবেন। এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বর্তমান সংবিধানের আলোকেই বিএনপি রূপরেখা তৈরি করছে কি না-এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা কাজ করছেন, কয়েকটি বিকল্প থাকবে।

গত ১৯ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১৩ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করার সময় বলেছিলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে সেই উদ্দেশ্যে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন। যথাসময়ে আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা জাতির সমীপে উপস্থাপন করব।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য এবং বিএনপি-সমর্থক কয়েকজন সাবেক আমলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রূপরেখা তৈরির জন্য কাজ করছেন। বিশ্বের কোন কোন দেশে নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে এবং সেসব দেশে নির্বাচনকালীন সরকারকাঠামো কেমন, সে তথ্য সংগ্রহ করছেন তাঁরা। এসব উদাহরণ সামনে রেখে একাধিক সরকারকাঠামো তাঁরা প্রস্তাব করবেন। পরে দলীয় সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সরকারি কর্মকমিশনের সাবেক সদস্য তারেক শামসুর রেহমান বলেন, বুলগেরিয়া, গ্রিস, পাকিস্তান ও নেপালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। তিউনিসিয়ায় ছিল সরকার ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার। ইতালিতেও সামনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।

২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন বর্জন করে দলটি। গত বছরের শেষ দিকে এসে বিএনপির অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এখন দলটি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা বলছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার কেমন হবে, তা চূড়ান্ত না হলেও এটির মূল চরিত্র নিরপেক্ষ হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার মনোভাব এখন পর্যন্ত বিএনপি প্রধানের নেই। তিনি সম্প্রতি একাধিক ঘরোয়া আলোচনায় বলেছেন, শুধু এই সরকারের বৈধতা দেওয়ার জন্য তিনি নির্বাচনে যেতে চান না।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, একেক জনের একেক রকম চিন্তা থাকতে পারে। এখনো নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে দলে কোনো বৈঠক হয়নি। তবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্পষ্ট করেই বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠনের রূপরেখা প্রস্তাব করবে। এখন বিভিন্ন দেশে নির্বাচনকালীন সরকারের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যথাসময়ে দলের নেতারা বসে সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হোক না কেন, দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। যখনই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তখন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকতে পারে না, তার প্রমাণ ১৯৭৩ ও ২০১৪ সালের নির্বাচন।

নির্বাচনকালীন এই সরকারের রূপরেখা কেমন হবে তা নিয়ে বিএনপির ভেতরও নানা আলোচনা আছে। দলটির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, বর্তমান সংবিধান মাথায় রেখেই এই রূপরেখা তৈরি করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত নির্বাচনের আগে সর্বদলীয় সরকারের যে ধারণা দিয়েছিলেন, সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে একটি রূপরেখা করা যেতে পারে। সরকার রাজি থাকলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী না রেখেও এটি করা সম্ভব বলে বিএনপির নেতারা মনে করেন।

আবার কোনো কোনো নেতা মনে করেন, নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করা যেতে পারে। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো যখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তখনো এই চিন্তাটি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।

বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, সরকার এখন খুব সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। বিপরীতে বিএনপির অবস্থা নাজুক। তাই বিএনপির প্রস্তাব সরকারের আমলে নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন একটি সর্বদলীয় সরকারও হতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই