সহসা তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা নেই
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টন নিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত ‘তিস্তা চুক্তি’ স্বাক্ষর আপাতত না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সামনের বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভা নির্বাচন এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু পদক্ষেপের কারণে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে ‘তিস্তা চুক্তি’ স্বাক্ষর চলতি বছরে নাও হতে পারে। একাধিক কূটনীতিক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
দুই দেশের কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, সামনের বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস উভয় দলই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সামনের এই রাজ্য সরকার (বিধানসভা) নির্বাচনের আগে রাজনৈতিকভাবে দুই দেশের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির স্বাক্ষর নাও হতে পারে।
এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তিস্তার পানি ধরে রেখে এক লাখ একরেরও বেশি জমিতে চাষাবাদ করে। ওই অঞ্চলের প্রায় আট মিলিয়নেরও বেশি অধিবাসী তিস্তার পানির উপর নির্ভরশীল। এমন অবস্থায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে, ভোটের কথা চিন্তা করে, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত সরকারের একটি কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানির প্রবাহস্থল সিকিম রাজ্যের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন ক্ষমতাসীন মোদি সরকার। তিস্তার উৎপত্তিস্থল থেকে প্রবাহিত পানি সিকিম সরকার ড্যাম ও বাঁধ দিয়ে ধরে রেখে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পাশাপাশি সিকিম থেকে তিস্তার পানির একটি অংশ অন্যদিকে প্রবাহিত (ডাইভার্ট) করে বিহার রাজ্যে দেওয়া হয়। যার কারণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও তিস্তার পানি আসার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশও তিস্তার ন্যায্য পানি পাচ্ছে না।
ওই সূত্রটি জানায়, সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে মমতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলেন, সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গে ন্যায্যভাবে অধিক পানি দিলে তা বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগ করতে সুবিধা হবে। নতুবা বাংলাদেশকে পানি দেওয়া সম্ভব নয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্র জানায়, মোদি সরকার সিকিম রাজ্যের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার পরিকল্পনা করছে। মোদি সরকার চাচ্ছে, সিকিম থেকে অধিক পানি পশ্চিমবঙ্গে দিতে, সেখান থেকে আবার বাংলাদেশে পানি আসবে। অন্যদিকে, সিকিম সরকারকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই পানির বদলে নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। যা দিয়ে সিকিম সরকার তার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তবে এই পরিকল্পনা সামনের বিধানসভার আগে সম্ভব হবে কিনা নিশ্চিত নয়।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে সাবেক রাষ্ট্রদূত ব্যারিস্টার হারুন-উর-রশীদ বলেন, ‘দুটি কারণে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস ওই নির্বাচনে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। মনে করা হচ্ছে, রাজ্য সরকার নির্বাচনের আগে রাজনৈতিকভাবে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে। কেননা এর সঙ্গে ভোটের বিষয়টি জড়িত। কেউই ভোট হারাতে চাইবে না।’
হারুন-উর-রশীদ আরও বলেন, ‘তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতা হিসেবে খুবই চমকপ্রদ প্রতিভা দেখাচ্ছেন। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও এখন পর্যন্ত মোদি বাহবা পাচ্ছেন। তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রেও তিনি চমকপ্রদ কিছু দেখাতে পারেন।’
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তিস্তা চুক্তির বিষয়ে নির্দিষ্ট করে এখনই কোনো দিন-তারিখ বলতে পারছি না। তবে আমরা আশাবাদী।’
প্রসঙ্গত, তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো দেশটির গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে মন্তব্য করেন। সুষমা স্বরাজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক সবগুলো পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছতে কাজ করছে।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফর করেন। এ সময় তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিস্তা নিয়ে সম্ভবত আপনাদের প্রশ্ন। দয়া করে আমার ওপর আস্থা রাখুন। আপনাদের কিছু সমস্যা আছে, আমাদেরও কিছু সমস্যা আছে। এটা আমাদের হাতে ছেড়ে দিন। পদ্মা, মেঘনা, গঙ্গা ও যমুনায় আমরা কোনো বিভাজন দেখি না। আমাদের মধ্যে কেউ বিভাজন সৃষ্টি করতে পারবে না।’ দ্য রিপোর্ট
মন্তব্য চালু নেই