‘সরকার চাইলে এক মুহূর্তে সংকটের সমাধান’

দেশে জাতীয় সংকট চলছে, এ দাবি করে প্রাক্তন সেনাপ্রধান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবর রহমান বলেছেন, ‘সরকারের সদিচ্ছাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনাসভায় তিনি বলেন, ‘যেভাবেই মূল্যায়ণ করা হোক না কেন, সরকার চাইলে এক মুহূর্তেই এর সমাধান সম্ভব। তাদের কাছেই সংকট সমাধানের চাবিকাঠি।’

সরকার নতুন নির্বাচনের জন্য সংলাপের আহ্বান জানালেই আন্দোলন থেমে যাবে বলেও মনে করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।

‘স্বাধীনতার মাসে অবরুদ্ধ গণতন্ত্র, বিপন্ন মানবতা’ শীর্ষক এ আলোচনাসভার আয়োজন করে বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও দেশ কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয়নি, দাবি করে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এই নেতা বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমাদের হাজার বছরের সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। শুধু উপমহাদেশে নয়, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে আমাদের উল্লেখযোগ্য জায়গায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু আমরা তা পারিনি।’

বর্তমান সময়ে দেশ গভীর খাদের দিকে যাচ্ছে মন্তব্য করে মাহবুবর রহমান বলেন, ‘গোটা দেশ আজ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে পেছনের দিকে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সর্বনাশের শেষ প্রান্তে চলে যাবে।’

গণতন্ত্রের দীর্ঘ পদযাত্রায় দেশে ভালো রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তে হিংসাত্মক রাজনীতির চর্চা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

‘সময়ের প্রয়োজনে সুস্থ রাজনৈতিক সংষ্কৃতির চর্চা প্রয়োজন। কিন্তু এর পরিবর্তে শত্রুতা, হিংসা, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির চর্চা হচ্ছে। এমন খারাপ কিছু নেই যে এখানে হচ্ছে না। বিষয়টি খুবই দু:খজনক,’ বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্যে গড়ে তোলার সময় এসেছে বলে মনে করেন প্রাক্তন এই সেনাপ্রধান।

‘দেশ কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে- গুড অর ব্যাড, মাদার ইজ মাদার। তেমনি ভালো হোক, মন্দ হোক, দেশ তো আমার। তাই দেশের জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’

দলের যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তিনি দেশের একটি বড় দলের যুগ্ম-মহাসচিব, প্রাক্তন মন্ত্রী। তিনি কোথায় তা কেউ বলতে পারছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- তিনি আত্মগোপনে আছেন। আবার বলা হচ্ছে, তাকে আত্মগোপনে রাখা হয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্নার বিষয়েও একই ধরনের কথা বলা হয়েছিল। সালাহ উদ্দিন সম্পর্কে এই ধরনের বায়বীয় কথা শুনতে চাই না। জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সরকার এই দায় এড়াতে পারে না।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে ‘পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ’ আখ্যা দিয়ে তাকে গ্রেফতারে বিস্ময় প্রকাশ করে মাহবুবুর রহমান। একই সঙ্গে বিএনপির অন্যতম যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে বারবার রিমান্ড দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

স্বাধীনতার মাসে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে কারো অবদান অস্বীকার করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসত্ত্বার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন। তার ৭ মার্চের ভাষণ জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় শূন্যতার মাঝে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।’

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মিজানুর রহমান, প্রাক্তন এমপি শাহ মো. আবু জাফর ও রাশেদা বেগম হীরা প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই