সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় লাপাত্তা “বিপ্লবী” পার্থ
টকশোতে গুছিয়ে কথা বলা, সমাবেশে দরাজ কণ্ঠে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে অল্প সময়ে রাজনীতিতে জায়গা করে নিলেও হঠাৎ আড়ালে আন্দালিব রহমান পার্থ।
নিজে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান হলেও আন্দোলন ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায় না।
তবে অন্যসময় টিভিতে গোলটেবিল বৈঠকে সরব থাকলেও এবার সেখানেও নেই।তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে তিনি রাজনীতি বিমুখ হয়ে গেছেন!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারবিরোধী টানা হরতাল-অবরোধের পুরো সময় জুড়েই তিনি ছিলেন বিদেশের মাটিতে।
তবে সম্প্রতি দেশে ফিরলেও লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন। বলতে গেলে আত্মগোপনে চলে গেছেন এই তরুণ নেতা।
রমজানে দেশে ফিরলেও এতো ইফতার অনুষ্ঠান গেল বিএনপি ও শরিক দলের কোনোটিতে দেখা মেলেনি তাঁর।
জোটের একটি সূত্রের খবর, পুলিশি ঝামেলা এড়াতে তিনি এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় অবস্থান করছেন। আর নিজের প্রতিষ্ঠিত গুলশানের আইন কলেজ ব্রিটিশ স্কুল অব ল তে সময় দিচ্ছেন।
‘জ্বালাময়ী’ বক্তব্য-বিবৃতি, সুন্দর-সুন্দর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আলোচনায় থাকা পার্থকে নিয়ে বিএনপি ও জোটের মধ্যে ক্ষোভ আছে বলে জানা গেছে। জোটের অনেক নেতার দাবি, শেখ পরিবারের সঙ্গে তার আত্মীয়তার কারণে বিএনপি জোটের অনেক পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। এছাড়া বিএনপি ও জোটের অনেক নেতার গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ালেও তাকে কোনো পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না।
বিএনপি ও জোটের একাধিক সূত্রের খবর, ৫ জানুয়ারির পর থেকে টানা অবরোধ শুরুর আগে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা ছাড়েন পার্থ। টানা তিনমাসের আন্দোলন বন্ধ হওয়ার কিছুদিন পর তিনি দেশে ফেরেন। এরপর আর তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
এমনকি রমজানে বিএনপি ও জোটের শরিক দলগুলো একাধিক ইফতারের আয়োজন করলেও কোথাও তিনি উপস্থিত হননি। তবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন প্রকাশকে প্রায় সবগুলো ইফতারে দেখা গেছে।
সরকারের সঙ্গে অনেকটা অলিখিত শর্তে ‘ঝামেলা’ ছাড়া আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন-এমন গুঞ্জনও আছে। শোনা যায়, অন্যমত শর্ত হলো তিনি বিএনপি ও জোটের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না। তবে ব্যক্তিগত কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বাধা নেই।
জোটের বেশ কয়েকটি শরিক দলের শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সম্প্রতি পার্থর সঙ্গে গুলশানে একটি অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে জোটের শরিক একটি দলের চেয়ারম্যানের সাক্ষাত হয়। ওই নেতার কাছে পার্থ নিজেই এমন ইঙ্গিত দেন বলে জানা যায়।
চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে ওই দলের মহাসচিব জানান, “পার্থর নিজের কর্মকাণ্ডেই তো প্রমাণ হয় তিনি সরকারের অনুকম্পায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। একটা ইফতারেও অংশ নেননি। জানা মতে জোটের কোনো নেতার সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ নেই।”
এদিকে আন্দোলনে ব্যক্তিগত বা দলগতভাবে তার কোনো অংশগ্রহণ চোখে না পড়লেও পার্থর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটা মামলা রয়েছে।
যদিও বিজেপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল মতিন সাউদ তার দলের চেয়ারম্যানের ব্যাপারে এমন খবর মানতে নারাজ।
তিনি বলেন, “পার্টির চেয়ারম্যান একটু নিজেকে আড়াল করে রাখছেন, অন্য কিছু নয়। বোঝেনই তো মামলাগুলো নিয়ে বিপদে আছেন। আর তিনি শ্বশুর বাড়ি থাকেন খবরটি ঠিক না, মাঝে মাঝে হয়তো সেখানে যান। তবে নিজের ল কলেজে বেশি সময় দিচ্ছেন।”
এদিকে অন্য সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও এখন তাতেও ভাটা পড়েছে। সবশেষ ৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে কলামিস্ট গাফফার চৌধুরীর বিতর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করে একটি স্টাটাস চোখে পড়েছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে টেলিফোনে অনেক বার চেষ্টা করলেও আন্দালিব রহমান পার্থর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সবশেষ ফেইসবুকে তার কাছ থেকে সময় চেয়ে এসএমএস করলে তারও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ঢাকাটাইমস
মন্তব্য চালু নেই