সরকারের মহৎ উদ্যোগ ফরমালিনবিরোধী অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে

বাংলাদেশে বিভিন্ন খাদ্যে ফরমালিন একটি ভয়াবহ সমস্যা- এটি মোটামুটি সকলেরই জানা। আর তাই গত ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল প্রশাসনের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের কারণে সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ ফরমালিনবিরোধী অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে।

এ অভিযান চালানোর জন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশকে ক্ষমতা দিয়ে পরিপত্র জারি করায় চটেছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা। সরকারি এ পরিপত্রে অভিযান চালানোর জন্য মেট্রোপলিটন এলাকা, জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হলেও বেশির ভাগ জেলা-উপজেলায় এখনো কমিটি গঠন করা হয়নি। বরং পরিপত্রে ‘অনেক ভুল আছে’ দাবি করে তা সংশোধন করে আবার জারি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন অনেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২১ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির তৃতীয় সভায় ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন ও বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক এবং ভেজাল মিশ্রণকারীদের বিরুদ্ধে ‘খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্য ও ভেজাল মিশ্রণ নিরোধ অভিযান’ নামের একটি সমন্বিত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। ওই পরিপত্রে মেট্রোপলিটন এলাকা, জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন করে অভিযান পরিচালনাসংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে মেট্রোপলিটন এলাকায় কমিটির সভাপতি মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলায় ইউএনওকে করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের নেতৃত্বে মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকটি জেলায় কমিটি গঠন করা হলেও বেশির ভাগ জেলায় করা হয়নি।

জানা যায়, পরিপত্র পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকরা ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, তাড়াহুড়া করে পরিপত্র তৈরি করায় সেখানে অনেক ভুল রয়েছে। সেসব ভুল সংশোধন না করে এ অভিযান চালাতে তাঁরা অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন, পুলিশকে এ দায়িত্ব দিয়ে রুলস অব বিজনেস লঙ্ঘন করা হয়েছে। পরিপত্রের বিরোধিতা করে অন্তত ১০ জন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ ধরনের চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পরিপত্র জারি ও নির্দেশনার ত্রুটিসংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পর গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে পরিপত্রের সংশোধনী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কমিশনারদের সভাপতির দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হবে কি হবে না তা সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই