সরকারের নন-কনসেশনাল ঋণ ২৪ হাজার কোটি টাকা!

চেষ্টার পরও দাতাদের সাড়া না পেয়ে কঠিন শর্ত (নন-কনসেশনাল) মেনে নিয়েই সরকার ঋণ নিচ্ছে। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে, মোট ১৮ মাসে সরকারের এধরণের ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা।

দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৩ সালে ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার কঠিন শর্তের ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ২ মাসের মধ্যে ১১টি প্রকল্প বাস্তবায়নে এ ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কঠিন শর্তে ঋণের এক তালিকা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত নন-কনসেশনাল ঋণের এ তালিকা তৈরি করেছে ইআরডি। তালিকা অনুসারে গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ প্রকল্পে ঋণ নেয়া হয়েছে ১৮৫ কোটি মার্কিন ডলার। যা টাকার পরিমাণে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। আগামী ৬ মাসে নতুন করে ১১ প্রকল্পের অধীনে নেয়া হচ্ছে ১২৮ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ। এর মধ্যে ১টি প্রকল্পের অনুমোদন হয়ে গেছে। এখন ঋণ চুক্তি হওয়ার অপেক্ষায়। বাকিগুলোর ব্যাপারে আগামী জুনের মধ্যে এ সংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায় সংশ্লিষ্টরা।

উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশ উল্লেখযোগ্য হল- বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, দ্বিতীয় সাবমেরিন সিস্টেম স্থাপন, দক্ষ সেবা প্রদানে ডিএনসিসি প্রযুক্তি উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য এনজিএনভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্প। এ বিষয়ে ইআরডি বলছে, বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার পর সহজ শর্তে ঋণের পথ অনেকটাই সংকুচিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দাতাদের অর্থায়নের বিষয়ে চিঠি দেয়া হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য বাধ্য হয়েই অপেক্ষাকৃত কঠিন ঋণের পথে হাঁটছে সরকার।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়ন তথা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল শীর্ষক প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে এগুলোর ব্যাপক সুফল পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কঠিন শর্তের ঋণে অর্থায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল কথা হল- যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, সে অনুসারে জাতি সুফল পাবে কিনা। যদি না পাওয়া যায় তবে তা দেশের অর্থনীতি জন্য সুখকর বিষয় হবে না।

ইআরডির নন কনসেশনাল ঋণের তালিকায় ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাস থেকে জুনের মধ্যে ১১টি প্রকল্পের অনুকূলে নেয়া হবে ১২৮ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ। যা টাকায় রূপান্তর করলে (৭৮ টাকা হিসাবে) দাঁড়ায় ৯ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), চীন সরকার, সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি), মার্কিন এক্সিম ব্যাংক ও বেলারুশ সরকারের কাছ থেকে এ ঋণ নেয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মির্জা এবি আজিজুল ইসলাম বলেন, কঠিন শর্তে ঋণের (নন-কনসেশনাল) অর্থ অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কেন না এসব প্রকল্পে যে আয় হবে তা দিয়ে আমাদের রফতানি আয় তেমন বাড়বে না। কিন্তু রি-পেমেন্ট করতে হবে ডলারে।

তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই নন কনসেশনাল লোনের অর্থ পরিশোধের সময় চলে আসে। কেন না এতে গ্রেস ও ম্যাচুরিটি পিরিয়ড অনেক কম থাকে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কোরিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশই এসব ঋণের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। বাংলাদেশ এখনও এ পর্যায়ে না গেলেও ঝুঁকির ঊর্ধ্বে নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর



মন্তব্য চালু নেই