সরকারের উদাসীনতায় ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের

সুন্দরবন রক্ষায় বর্তমান সরকার উদাসীন। ট্যাংকার ডুবির পর সরকারের এই উদাসীনতায় সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ট্যাংকার ডুবির ৪৮ ঘণ্টা পরেও সরকার তেল নিঃসরণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

শুক্রবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও তদন্ত কমিটির প্রধান মেজর (অব.) হাফিজ প্রতিবেদন পড়ে শোনান।

এসময় সুন্দরবন রক্ষায় ৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুর্ঘটনার পর কোস্টগার্ডকে নিয়োজিত করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যেতো। কিন্তু সরকার তা করেনি। বরং এসময় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য লক্ষ্য করা গেছে, যা ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

এতে বলা হয়, দুর্ঘটনার পর কমিটি গত ২২ ডিসেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এছাড়া কয়েকজন সদস্য এক সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালান। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েরে প্রফেসর ফজলুর করিম তদন্ত কাজে সহায়তা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৯ ডিসেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের মধ্যবর্তী শ্যালা নদীর মৃগামারী এলাকায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ ’ নামে একটি ট্যাংকার ডুবে যায়। সকাল ৭টার দিকে ‘এমটি টোটাল’ নামে একটি তেলের ট্যাংকার খুলনা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রাকালে ওটি সাউদার্নের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। ট্যাংকারের বিপুল পরিমাণ তেল শ্যালা চ্যানেল হয়ে সুন্দরবনের বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

এতে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে তেল অপসারণে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়ায় শ্যালা, পশুর, বলেশ্বর নদী ও অসংখ্য খালের ভেতর দিয়ে তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনে, যা সুন্দরবনের বৃক্ষরাজি, মৎস্য সম্পদ ও জীব বৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। সুন্দরবনের শ্বাসমূলের এক থেকে দেড় মিলিমিটার তেলের আস্তরণ পড়েছে, তা গাছের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ। তেলযুক্ত পানি, বনজ মৎস্য ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। বিরল প্রজাতির ডলফিন ইরাবতির অভয়ারণ্য হুমকির মুখে পড়েছে। এই তেল সুন্দরবনের ওপর নির্ভশীল লাখ লাখ মানুষের জীবনজীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। বনবিভাগ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার কথা বললেও অনেকের ধারণা তা ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই দুর্ঘটনার পর সরকারের দায়িত্ব ও কাজে অবহেলা পরিলক্ষিত হয়েছে। সুন্দরবন রক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ উদাসীন। নৌপথ ও অভয়ারণ্য রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো সমন্বিত নীতিমালা নেই। দুর্ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে তেল অপসারণের কোনো তৎপরতা চালানো হয়নি। সুন্দরবন রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বিএনপি নেতারা সুন্দরবন রক্ষায় ৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

১. বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষার জন্য শ্যালা নদী ও সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌচলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করা।
২. অবিলম্বে ঘষিয়াখালী ও মংলা চ্যানেল চালু করা। চ্যানেলের নাব্য ফিরিয়ে আনতে দখল হয়ে যাওয়া খালসমূহে অবৈধ নির্মিত বাঁধ দ্রুত অপসারণ।
৩. সুন্দরবনের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও জাহাজভাঙা শিল্প স্থাপন না করা।
৪. ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা এবং তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়।
৫. নৌপথে টহল জোরদার ও অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করে সুন্দরবনের নিরাপত্তা জোরদার।
৬. সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষ গঠন।

সুন্দরবন নিয়ে বিএনপির প্রতিবেদন



মন্তব্য চালু নেই