সরকারি কর্মচারীদের সততা রক্ষায় নতুন আইন
সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক সততা রক্ষায় নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। গত বছর মন্ত্রিসভর বৈঠকে নীতিগত অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে খসড়াটি। বর্তমানে যাচাইয়ের (ভেটিং) জন্য সেটা আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
কর্মচরীদের আর্থিক অসততা রোধ করে নৈতিকতা রক্ষায় প্রস্তাবিত আইনের অধীনে পৃথক বিধি-বিধানের করার কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। ‘সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৫’ শীর্ষক আইনের খসড়াটি তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। খসড়ার একটি কপি এনটিভি অনলাইনের হাতে এসেছে।
ভেটিংয়ের দায়িত্বে থাকা আইন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারি অর্থ নানা কায়দায় আত্মসাতের মাধ্যমে বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ার প্রবণতা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে দিনদিন বেড়ে চলছে বলে দেখা যাচ্ছে। তা ছাড়া কর্মচারীদের অনেকেই আয়কর রিটার্নে তাদের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ শ্বশুরবাড়ির উপহার অথবা শ্যালক, সম্বন্ধী বা ভায়রার বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স হিসেবে দেখাচ্ছেন। আর এই প্রবণতা বাড়ছে। তিনি বলেন, একজন কর্মচারী উপহার নিলেও তা কী পরিমাণ হবে, এই আইনের আওতায় পরবর্তী সময়ে একটি বিধি দ্বারা সেটা নিরূপণ করা হবে।
প্রস্তাবিত আইনের ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারীরা তাহাদের কর্মে কঠোর অনুশাসন মানিয়া চলিবেন, উচ্চ নৈতিকতা বজায় রাখিবেন, সহকর্মীদের সহিত সহমর্মিতাবোধ ও সদ্ভাব রাখিবেন এবং পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করিবেন। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাহারা সম্পৃক্ত হইবেন না এবং নিরপেক্ষভাবে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করিতে সদা সচেষ্ট থাকিবেন। সরকারি কর্মচারী আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বাধ্য থাকিবেন।’
আর্থিক সততা নিশ্চিত করার বিষয়ে একই ধারার (গ) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী নিজ কর্তৃত্বে অর্থ ব্যয় বা উহার অনুমোদনের প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ সতর্কতার সহিত সরকারি অর্থ ব্যয় ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিধান মানিবেন এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করিবেন।’
খসড়ার ১৩ ধারা (খ) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্মচারীর দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত কোনো অপরাধের অভিযোগ সস্পর্কে যথোপযুক্ত সংস্থা তদন্ত করিতে ও উপযুক্ত আদালতে অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন, তবে এ সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রয়োজ হইলে সরকারের অনুমোদন লাগিবে।’
প্রস্তাবিত আইনের আওতায় বিধি প্রণয়নে সরকারকে এখতিয়ার দিয়ে খসড়ার ১৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাহা সংশোধন বা পরিবর্তন করিতে পারিবে।’
সরকারি অর্থ আত্মসাৎ বা তছরূপ করলে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, খসড়াটি এখনো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। এরপর পাস হলে আইনের আওতায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় বিধি তৈরি করবে। বিধিতেই বিস্তারিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি। এনটিভি।
মন্তব্য চালু নেই