মিডিয়া ভাবনা
সম্প্রচার নীতিমালা বনাম মিডিয়ার ভবিষৎ
আমাদের দেশে প্রতিটি পরিবারে একজন করে পরিবার প্রধান থাকে । তারা সাধ্য মতো পরিবারের সকল সদস্যের প্রয়োজন মেটাতে যথা সাধ্য চেষ্টা করে । পরিবার প্রধান তার নিজস্ব ছকে পরিচালনা করেন তার সংসার । বরাবরই প্রতিটি পরিচালক তার দক্ষতার নিপূণ হাতে ।
সংসারকে ঢেলে সাজায়। দেখা যায়,অধিকাংশের পরিশ্রমের ফলে সংসারে সুখ ফিরে আসে । তারা চরম আনন্দে দিন কাটায় । কিন্তু দুভার্গ্যজনক হলে সত্য যে সুদীর্ঘ ৪৩ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশ নামক পরিবারে কোন সুখের ছোঁয়া লাগে নি । বরং কষ্ট আর কষ্ট । তবে এ কষ্ট কিন্তু কোন এম.পি-মন্ত্রীদের নেই। শুধু মাত্র দেশপ্রেমিক জনতার । বলা চলে¬Ñ যারা সরকারের দাস। ইচ্ছা থাকলে ও তাদের তেমন কিছু করার থাকে না।ক্ষমতার পালা বদলে ২০০৮ সালে একটি কারচুপি নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠন করে । সরকার গঠনের কয়েক মাসের ব্যবধানে সেনাবাহিনীকে ধবংস করে । তার পর আস্তে আস্তে সব কিছুৃৃৃ.. । সাথে সাথে চড়াও হতে থাকে বিরোধী দলের উপর । দেশের নাগরিকের প্রতি যে দায়িত্ব তা পালন না করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে । বিরোধী দলকে বিচারের মুখোমুখি করা,তাদেরকে দমন নিপীড়ন করা কেবলমাত্র সরকারের দায়িত্ব হতে পারে না। কিন্তু আমরা কী দেখলাম ! বিরোধী দল মানে ভিকটিম । ভিটে মাটি ছাড়া মামলায় জর্জরিত। যখন তখন গ্রেফতার রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন ।গুম খুন ফাঁসি আর কত কী ! বলা চলে এক অদ্ভুত দেশে আমরা বসবাস করছি । ইতোমধ্যে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এক তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশনারের অধীনে একটি নির্বাচন হয়েছে ( দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন) যা শুনলে সবাই হাসি পায়। বিনা ভোটে ১৫৩ জন এম. পি নির্বাচিত হয়ে জন প্রতিনিধিত্ব করছে । ছি! ছি!এত লজ্জা রাখি কোথায় ? পরীক্ষা ছাড়া সার্টিফিকেট। পরীক্ষা ব্যতিরেকেই যদি শিশু শ্রেণীর কোন শিক্ষার্থীর হাতে কোন সনদ দেওয়া হয় সে ওটা নিতে সংকোচ বোধ করবে । কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা এসুযোগকে লুফে নিছে । তাদের অপমান বোধ না থাকলেও জনগণ চরম কষ্ট অনুভব করে । আমরা ভোট দেয়নি অথচ নেতামী দেখ বেচারার। সেই সাথে সাথে স্বচ্ছ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষা করছে। যাহ্যক আমরা যে যাই বলি না কেন সরকার জনগণের জন্য কিছু না করতে পারলে ও দলীয় নেতা কর্মীদের জন্য তো কিছু করেছে । বাদ দে তো দেশের কথা নিজে বাঁচলে বাবার নাম । ক্ষমতা হাতে থাকলে সব কিছু ঠিক ঠাক । সরকারের হাফ মন্ত্রী , ফুল মন্ত্রী ,আতি নেতা পাতি নেতারা যে অপকর্ম করেছে তা আজ ঢাকার জায়গা কোথায়? শাক দিয়ে তো আর মাছ ঢাকা যায় না। সরকার বিরোধী দলকে শায়েস্তা করার জন্য অবাধে জোয়ারের মতো মিডিয়ার লাইসেন্স দিয়েছিল। চুক্তি ছিল তিলকে তাল বানিয়ে বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে হবে। তারা তাই করতেছিল । কিন্তু বিধি বাম । সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে এত দুর্নীতি করেছে যে সাংবাদিকরা সহ্য করতে না পেরে তা প্রকাশ করে । ফলে সরকার মহোদয়ের মান সম্মান বুঝি আর থাকলো না । তাই সত্যকে গোপন রাখতে মিডিয়ার স্বাধীনতাকে খর্ব করতে মিডিয়া বান্ধব সরকার সম্প্রচার নীতিমালা করতে যাচ্ছে; যেখানে মিডিয়া ও সংবাদ কর্মীদের কোন ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকবে না। গত ৪ আগষ্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি আয়োজিত শেখ কামালের ৬৫তম জন্মদিনের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও আইন বিচারও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন – গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রনয়নে সরকাররে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ না হয় ।( দৈনিক নয়া দিগন্ত ৫ আগষ্ট ২০১৪) মুহতারমের বক্তব্য ও সরকারের কাজ পুরোপুরি উল্টো।এ থেকে বুঝা যায় আওয়ামী লীগ যা বলে তা করে না। মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ ওজনগণের যে কল্যাণের ¯্রােতধারা অব্যাহত ছিল সেটি আর সম্ভব নই। সরকার চাচ্ছে প্রতিটি মিডিয়া বি. টি.’র ভি ভূমিকায় থাকবে। যেখানে থাকবে ২০০১-০৬ বি . এন .পি জামায়াত শাসন আমলে কী ঘটেছিল । ফিরে দেখা ।
কোথাও আওয়ামীলীগের মিটিং হলে সরকার দলীয় মন্ত্রীরা কোথাও কিছু উদ্বোধন করলে সেটা নিউজ হবে। সারা দিনের সিডিউল হবে শুধু সরকারের নমঃ নমঃ করা ঠিক আছে তো? মিডিয়ায় চোখ রাখলে দেখতে চাই জয় বাংলা,বাংলার জয়। ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার সিরিজ নিউজ হবে। শেখ মুজিবুর রহমান , শেখ রাসেল, শেখ কামালের জন্মদিনে সেরাম নিউজ করবে অন্যথায় তোদের অবস্থা…. । গুম, খুন পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু যাই হোক না কেন টু শব্দ করবি না। নুর হোসেনরা সাত খুনের আসামী হলেও দুধ কলা দিয়ে ভাত খাওয়াবো তোরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবি । শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে হেফাজত কর্মীদের হত্যা করবো আর তোমরা শুধু জ্বি আব্বা হুজুর বলবি। কাদের মোল্লার ফাঁসি হবে কিন্তু প্রতিবাদের কোন খবর প্রকাশ হবে না। পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতি হবে , রেলের কালো বিড়াল বেরিয়ে আসবে, ব্যাংক গুলোর টাকা লোপাট হবে, সাভার ট্রাজেডি ঘটবে , নির্বিচারে মানুষ হত্যা হবে কোন কথা হবে না। আমার সোনার ছেলেরা ধর্ষণের উৎসব পালন করবে আমরা তাদের সংবর্ধনা দেব । দিন দুপুরে চাপাতি দিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করবে আর আইনের ফাঁক ফোকরে ক্ষমা করে দেব। সোনার ছেলেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি করবে, শিক্ষকÑশিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করবে তোমরা না দেখার ভান করবে । সব মিলে বলা যায় জাতির জাগ্রত বিবেক নামে খ্যাত সাংবাদিকরাই হবে জাতির অন্ধ বিবেক। এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রোগ্রামে ১৫০-২০০ জন লোক থাকলে লিখবে ১৫০০০-২০০০০ বেগম সাজেদা চৌধুরীর প্রোগ্রামে ৫০-৬০ জন থাকলে লিখবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার । প্রধান মন্ত্রীর প্রোগামে ৩০০০ হাজার লোক থাকলে ৩০ লাখ লিখবে। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নতুন সম্প্রচার নীতি মালা। কোন ব্যক্তিকে জেল খানায় বন্দী রেখে যেমন বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। মিডিয়ার ক্ষেত্রে ও সরকার তেমন আজগুবি নীতিমালা তৈরী করেছে। আর সেই নীতি অনুসরণ করলে একজন সাংবাদিককে আর সাংবাদিক বলা যাবে না। কারণ কোন গ-ির ভিতরে থেকে সত্য প্রকাশ আদৌও সম্ভব নয় । গত ১২ আগস্ট সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তথ্য মন্ত্রী হাসানুর হক ইনু বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা দিকনির্দেশনা মূলক । । এটি কোন আইন নয় । এতে শাস্তির কোন বিধানও নেই । তাই কন্ঠরোধের বিষয়টি সম্পূর্ণ অমূলক ও কল্পনাপ্রসূত । সম্প্রচার নীতিমালায় সশস্ত্রবাহিনী ও আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত কোন বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ বিদ্রুপ বা পেশাগত ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচারের ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা আরোাপ করা হয়েছে । সরকার এই হীন সিদ্ধান্ত নিয়ে মিডিয়ার কণ্ঠরোধের মাধ্যমে মিডিয়ার স্বাধীনতা ও মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করে নিচ্ছে । যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে । আশা করি সরকারের বোধোদয় ঘটবে । যে সাংবাদিক ও সংবাদপত্র ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে অগ্রণী ভ’মিকা রেখেছিল আজকের দিনে সেই ভ’মিকা অব্যাহত থাকবে। আর সেই সুযোগদানে সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ কামনা করছি ।
লেখক: সাংবাদিক , কলামিষ্ট । সম্পাদক :ডিউ টাইম নিউজ ডট কম ।
ই-মেইল: [email protected]
মন্তব্য চালু নেই