ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন :
সমান সুযোগ পাচ্ছেন না বিএনপি প্রার্থীরা
ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ডিসিসি নির্বাচনে মির্জা আব্বাস ও তাবিথ আউয়ালের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার অনেকের নামে ‘মিথ্যা’ মামলা থাকায় তারা মাঠেও নামতে পারছেন না।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ২০ দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বাধা দিচ্ছেন। লিফলেট ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া দলের বহু নেতাকর্মীর নামে একাধিক মামলা থাকায় তারা প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। নির্বাচন কমিশনের কাছে বারবার দাবি জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ মুহূর্তে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখছি না। কী ঢাকা সিটিতে, কী চট্রগ্রামে। এমন অবস্থা থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিটি নির্বাচনের গুরুত্ব রয়েছে। বিশাল একটি জনসংখ্যার অংশগ্রহণ রয়েছে সিটিতে। তাই ৫ জানুয়ারির মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আমাদের কাম্য নয়।’
মাহবুবুর বলেন, ‘সরকারের উচিত হবে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে দেওয়া, পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ থেকে সরে আসা। প্রশাসনকেও নিরপেক্ষ আচরণ করতে হবে। সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।’
ঢাকা সিটি করপোরেশনের দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সময় মঙ্গলবার বাধা দেওয়া হয়েছে। বুধবার এমন অভিযোগ করেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে পোস্টার লিফলেট ছিনিয়ে নিয়েছে পুলিশ। ছাত্রলীগ নেতা শিশির অস্ত্র উঁচিয়ে আব্বাসের কর্মীদের ভয় দেখিয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্পর্কে ‘আর্দশ ঢাকা আন্দোলন’ কমিটির অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি আ ফ ম ইউসূফ হায়দার বলেন, ‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছি না। অনেকেই মামলার কারণে মাঠে নামতে পারছেন না। নির্বাচনের আগে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না এ নিশ্চয়তা দিতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ রকম আশ্বাস আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার করা যাবে না এর মানে এই নয়, আমরা মামলা থেকে মুক্তি চাচ্ছি। আমরা জামিনের কথা বলছি। আইনি প্রক্রিয়ায় মামলা চলতে পারে। তবে ২৮ এপ্রিলের আগে কোনোরকম হয়রানি করা যাবে না।’
ঢাকা সিটি দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। দিনে পোস্টার লাগানো হলে রাতে তা ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া আমাদের কর্মীদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সবাইকে সমান সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অবশ্যই কমিশনের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’ একই সঙ্গে মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির সকল কাউন্সিলরকে প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য সুযোগ দেওয়ারও দাবি জানান আফরোজা আব্বাস।
ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘এটিকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলা যাচ্ছে না। একটি ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারছেন না। মাঠে নামলে কাকে কখন আটক করা হয় তার নিশ্চয়তা নেই। সকল প্রার্থী সমান সুযোগ না পেলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার কোনো সিমটম দেখা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘ভয়ভীতির কারণে আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারছেন না। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন করেছি, যাতে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের হয়রানি করা না হয়। আশা করি কমিশন এ সব বিষয়ে উদ্যোগ নেবে।’
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বুধবার রাতে বলেন, বিএনপি যে অভিযোগ করেছে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যায় না। তারা বলার জন্য বলছে। তারা নির্দিষ্ট করে বলছে না কোথায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি। তারা যদি নির্দিষ্ট করে বলে আমরা বিষয়টি অবশ্যই দেখব।
বিএনপির অভিযোগ সম্পর্কে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসার মীর সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, এখন পর্যন্ত বিএনপি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ না করলে তো আমরা এ বিষয়ে কিছু বলব না। আগে অভিযোগ করুক, তারপর এ বিষয়ে কথা বলব। দ্য রিপোর্ট
মন্তব্য চালু নেই