সবুজের দ্বীপ ভোলার কুকরী-মুকরী পর্যটনের পথে এগুচ্ছে

সাগরের উত্তাল ঢেউর গর্জন, নির্মল বাতাস, বাহারী ম্যানগ্র্যোভ বন, রাস্তার পাশের সারি সারি গাছ, নারকেল বাগান আর বালুর ধুম নিয়ে অপরুপ প্রকৃতির সাজে সাজানো এক জনপদ ভোলার চরফ্যাশনের কুকরী-মুকরী। পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর প্রচীনতম এ জনপদটিতে নতুন করে আধুনিকতার ছোয়া পাচ্ছে। বিভিণœ প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় পর্যটনের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে এ জনপদটি।
ইতিমধ্যে বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, আধুনিক রেস্ট হাউজ ও পাখি পর্যবেক্ষন কেন্দ্র। এসব কার্যক্রম জুন মাসের মধ্যে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বনের জীব বৈচিত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে বাহারী প্রজাতির বৃক্ষ-তরুলতা রোপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সুত্র বলছে, বঙ্গোপসাগরের কূলঘেষা জনপদ কুকরী-মুকরী ৭০ ঘূর্নিঝড় পরবর্তি সময়ে বন বিভাগ বৃক্ষ রোপন করে। সেটি কুকরীর এক সবুজ বিপ্লব। সেই থেকে এ জনপদে ঝড়-জলোচ্ছাসসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগ বৃক্ষের সবুজ দেয়াল হিসাবেই রক্ষা করে আসছে। বর্তমানে ১৩ হাজার ৯শত ৪৬ একর নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির সবুজ বেস্টুনী। এখানেই রয়েছে কাকড়া, বাইন, কেওয়া ও গেওয়াসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ। এসব গাছের সংখ্যা ২ কোটি ৫০লাখে অধিক। এখানে রয়েছে সাড়ে ৭হাজার হরিনসহ বেশ কিছু বানর, বন মাড়কসহ বিভিণœ ধরনের বৈচিত্রময় প্রানী ও উদ্ভিদ। হরিনের মিঠা পানির সংকট দুর করতে একটি পুকুর তৈরী করা হয়েছে, আরো বেশ কিছু পুকুর তৈরীর কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

বিভাগীয় বন কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, কুকরী-মুকরীকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে প্রায় ৯ কোটি ৩৬লাখ টাকা ব্যায়ে আধুনিক রেষ্ট হাউজ ও ১৫ লাখ টাকা ব্যায়ে পাখি পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে। তিনতলা বিশিষ্ট রেস্টহাউজে ২০টি আবাসিক রুম থাকবে। এছাড়াও প্রশিক্ষন, সভা, সেমিনার ও ওয়ার্কসপ কক্ষ থাকবে। থাকবে নিজস্ব জেনারেটর ও বিদ্যুৎ এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সুবিধার্থে এসব কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। পাখি পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরতে আসা মানুষদের বসার স্থান হিসাবে বেঞ্চ ও ছাতা দেয়া হবে। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞ দল সয়েল পরিক্ষা করে গেছেন। এখন চলছে ডিজাইন ও প্লান প্রক্রিয়ার কাজ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, চলতি বছরেই দুটি প্রকল্পের কাজ শুরুহবে। এতে কুকরী-মুকরী পর্যটকদের আরো বেশী আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে, পাশাপাশি ভোগান্তিরও অবসান হবে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এটি মানবসৃষ্ট বনে রুপান্তিত হয়েছে। বনে আরো কিছু সংখ্যক প্রানী আনার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী কয়েক বছরেই সুন্দরবনের মতই কুকরী-মুকরী পূর্নতা পাবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাগরের বুক চিরে জেগে উঠেছে বড় বড় বিচ্ছন্ন সবুজের দ্বীপ। সেখানে লাখ লাখ গাছের সমারোহ। শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠে এসব অঞ্চলের চারপাশ। কুকরীর বালুর ধুম ও নারিকেল বাগান মুগ্ধ করে ভ্রমনপিপাসু মানুষকে। ছোট ছোট খাল, এর দু’পাড়ে দিয়ে বৃক্ষের সমারোহ। নৌকা ঘুরে প্রান জুড়িয়ে যায় বিনোদন প্রিয় মানুষের। এখানে বসেই সূর্যদয় ও সূর্যাস্তর সৌন্দয্য উপভোগ করা যায়।

কুকরীতে বিদ্যুৎ না থাকলেও রাতে কুকরী যেন সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেলো, খুব শিগ্রই ২ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারী একটি সংস্থা। সেটি চালু হলেই কুকরীর দুই কিলোমিটার এলাকার বিদ্যুৎ ভোগান্তির অবসান হবে।
কুকরী-মুকরী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজেদুল আলম বলেন, চর পাতিলা, পশ্চিম চর দিঘল, চর দিঘল, চর আলীম, চর জমিনসহ বেশ কিছু চর থাকলেও আরো নতুন দুটি চর জেগে উঠছে কুকরী-মুকরীতে। সেখানেও বৃক্ষ রোপনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। মানুষকে মুগ্ধ করার পথে এগুচ্ছে কুকরী-মুকরী।
ঘুরতে আসা মাকসুদ, রাশেদ ও খোকন জানান, এরআগে বহুবার কুকরী-মুকরীর নাম শুনেছি, কিন্তু কখনও আসা হয়নি। এখন কুকরীতে এসেই প্রান জুড়িয়ে গেলো। এখন শুধু থেকে যেতেই ইচ্ছে করে। এখানে আরো কিছু সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দিলে অনেক ভালো হতো।
স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম, কালাম ও জাফর বলেন, দেশের অন্য স্থানে আসতে ঝক্কি ঝামেলা বেশী থাকলেও কুরীতে অনায়াসে নৌ পথে আসা যায়। এতে খরচও খুবই কম। কিন্তু মানুষের জন্য থাকা-খাওয়া সু ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে ফিরে যেতে হয়।
শাহে আলম, সাগর ও জুয়েল বলেন, শীত মৌসুমে কুকরীতে অন্তত ৫০/৭০টি পিকনিক দল ঘুরতে আসে। তারা পিকনিক করে চলে যায়। এখানকার সৌন্দয্য দেখে অনেকেই মুদ্ধ।
কুকরী-মুকরী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, দেশের মধ্যে কুকরী-মুকরী একটি পরিচিত নাম। এখানে দেশ বিদেশ থেকে মানুষ ঘুরতে আসেন। কিন্তু আধুনিক সুবিধার অভাবে তারা প্রকৃতির পুরোপুরি তৃপ্তি গ্রহন করতে পারছেন না। এখানে আধুনিক হোটেলসহ থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থা হলে আরো বেশী মানুষ ভীড় জমাতো।
সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি, পর্যটন কেন্দ্র কুকরী-মুকরীতে যেন আরো কিছু প্রকল্প দেয়া হয়। এতে একদিকে যেমন এলাকার উন্নয়ন হবে অন্যদিকে দেশের সুনাম বয়ে আনবে।



মন্তব্য চালু নেই