সবার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করতে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান!
বিশ্বের ১০টি মারাত্মক প্রাণঘাতি রোগ বিশে করে অতিরিক্ত ওজন, স্থুল স্বাস্থ্য, হাপানি, ক্যান্সার, মুত্রনালির সমস্যা, হৃতরোগ, কিডনি বিকল এর চিকিৎসায় ২ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশী অর্থ ব্যায় হয় যা বিশ্বে জিডিপির প্রায় ৮%। অথচ উৎপাদক, বাজারজাতকারী থেকে শুরু করে ১৬ কোটি মানুষই ভোক্তা। কিন্তু খাদ্যে ভেজাল, ফরামালিন মিশ্রন, ক্যামিকেল দিয়ে ফলমুল পাকানো, নকল ভেজাল ওষধ তৈরী করে মাবস্বাস্থ্যকে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন করে তুলেছে তারাও এই ভেজাল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জেলা প্রশাসন, ভোক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তর, বিএসটিআই এর নজরদারি সত্বেও এ মানববিধবংসী অপতৎপরতা থেমে নাই।
খাদ্যে ভেজাল রোধে নিররপদ খাদ্য আইন ২০১৩ প্রনয়ন করা হয়েছে, ভোক্তাদের ভোগান্তি ও প্রতারনা রোধে ভোক্তা সংরক্ষন আইন ২০০৯ প্রনয়ন করা হলেও সরকারের ব্যবসায়ী তোষননীতির কারনে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষন উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। যার কারনে ভেক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার ০৫ বছর হলেও এখনও খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। তাই খাদ্যে ভেজাল যা মানুষ খুনের চেয়ে মারাত্মক, ব্জ্ঞিানীরা যাকে শ্লোপয়েজন হিসাবে অভিহিত করেছেন তা রোধে সরকারী প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্থানীয় জনগনসহ সকল মহলের সম্মিলিত সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়েছে। তা না হলে আগামী প্রজন্ম একটি রুগ্ন, মেধাহীন ও পঙ্গু জাতিকে পরিনত হবে। ১৫ মার্চ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস ’১৫ উদযাপন উপলক্ষে নগরীর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর ও কনুজমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম শহীদুর রহমান, ক্যাব এর কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, সাবেক সাংসদ মাজহারুল হক শাহ, জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম। ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় অুনিষ্ঠত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক যোবায়ের আহমদ, আলোচনায় অংশনেন বিএসটিআই এর উপ-পরিচালক শওকত ওসমান, বিশিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাবেক সভাপতি আশরাফ খান, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ এর নগর সম্পাদক এম নাসিরুল হক, চট্টগ্রাম নাগরিক সংরক্ষন পরিষদের সভাপতি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি সেতারা গফ্ফার, বিভাগীয় বিশেষ প্রতিনিধি লায়ন সোহেল মৃদা, চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফেকচার এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক গৌতম দাস, ক্যাব মহানগর কমিটির সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি আবিদা আজাদ, ক্যাব বোয়ালখালীর সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, নারী নেত্রী নারী জন্নাতুল ফেরদৌস, ক্যাব পাহাড়তলীর নেতা হারুন গফুর ভুইয়া, ক্যাব চান্দগাঁও এর জানে আলম, ইসমাইল ফারুকী, লায়লা আরজুমান্দ বানু, লায়ন যাদব চন্দ্র, প্রকৌশলী মুহাম্মদ ইব্রাহিম, যর্ণা বড়ুয়া, প্রশিকা তৃনমুল ফেডারেশনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সোহাগ প্রমুখ।
বক্তাগন অভিযোগ করে বলেন সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের প্রতি বিমাতাসুলভ অচরনের কারনে প্রতিষ্ঠানটি শক্তিশালী হতে পারে নি। যার কারনে এটি জনগনের আশা আখাংকার প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না। জনবল, লজিস্টিক ও তহবিল সংকটের কারনে এটি শুধু মাত্র মোবাইল কোর্টেই এর কার্যক্রম সীমিত রেখেছে। অথচ ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্ঠি, প্রচারনা বিষয়ে কোন কার্যক্রম হাতে নিতে পারেনি। বক্তাগন আরো বলেন বাংলাদেশের ভোক্তারা শুধুমাত্র হেলপ লেস ভোক্তা নয়, তারা ঘুমন্ত ভোক্তাও। কোন জায়গায় প্রতারিত বা হয়রানি হলেই সরকারের প্রতি দোষারুপ করি। কিন্তু ভোক্তা হিসাবে তাদের যে করনীয় আছে সে বিষয়ে পুরোপুরি ভুলে যাই। তাই ভোক্তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অসাধু ব্যবসায়ীসহ সেবাপ্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বক্তাগন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ভোক্তা স্বার্থ সংস্লিষ্ঠ বিভিন্ন রাস্ট্রীয় কাঠামো ও সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে সত্যিকার অর্থে ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না হওয়ায় ভোক্তা স্বার্থ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এছাড়াও ভোক্তাদের সংগঠনগুলিকে সরকারী বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, সরকারের ব্যবসায়ী তোষননীতি, আইনের যথাযথ প্রয়োগে শৈথল্য, ভোক্তা সংগঠনগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার ও আর্ন্তজাতিক দাতা সংগঠনের উদাসীনতা, বর্তমানে প্রচলিত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষনে আইনে প্রতারিত হলে যথাযথ আইনী প্রতিকার লাভে সুযোগ না থাকা, ভোক্তাদের মাঝে অসচেতনতা ও অসংগঠিত থাকার কারনে ভোক্তারা প্রতিনিয়ত তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং ভোক্তা স্বার্থ প্রতিনিয়তই লংগিত হচ্ছে।
দেশের ১৬কোটি মানুষই ভোক্তা, আইন প্রয়োগে কর্তৃপক্ষ গুলি একে অপরের উপর দোষ চাপানোর কারনে ভোক্তারা যথাযথ আইনী প্রতিকার পাচ্ছে না। আর ভোক্তা অধিকার লংগনের কারনে দেশে সাধারন মানুষের মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই এখন প্রয়োজন সকল পর্যায়ে ভোক্তা হিসাবে তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া, দায়িত্ববান হওয়া এবং সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে মাুনষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় একযোগে কাজ করা। ভোক্তা হিসাবে সেবা সার্ভিস ও পণ্য ক্রয়ে হয়রানি হলে ক্যাব, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে জানানো, স্থানীয় ভাবে ভোক্তা সংগঠন গড়ে তুলে ভোক্তাদেরকে সংগঠিত করে অন্যায় ও অন্যার্যতার বিরুদ্ধে স্থানীয় ভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “স্বাস্থ্যকর খাদ্য ভোক্তার অধিকার” হলেও বর্তমান আইনে প্রতারিত বা অধিকার ক্ষুন্ন হলে প্রতিকার পাবার বিধান না থাকা, অতি জনগুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলিকে আইনের আওতায় না আনা এবং অপরাধগুলির জামিনযোগ্য হবার কারনে অপরাধীরা আইনে তোয়াক্কা না করেই প্রতিনিয়তই একই অপরাধ করছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের নীতি নৈতিকতা না থাকার কারনে একশ্রেণীর মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অবৈধ মজুত, দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণ করে জনজীবন দুর্বসহ করে তুলেছে।
অন্যদিকে পণ্যে ভেজাল, ওজনে কম দেয়া, মানুষকে জিম্মি করে মুনাফা করা ইত্যাদি নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষন, বাজার তদারকিকে স্থানীয় জেলা, উপজেলা প্রশাসনের অগ্রাদিকার কাজের তালিকায় না থাকায় তারা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছে না। যে যার ইচ্ছা মতো পণ্য দ্রব্য ও সেবা সার্ভিসের দাম বৃদ্ধি, কমানো ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ফলে সাধারন মানুষ ব্যবসায়ী ও সেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছে জিম্মি হয়ে আছে। অন্যদিকে খাদ্য পণ্যে ভেজাল ও ফরমালিন মিশ্রনকারী ব্যবসায়ীদের শাস্তি শুধুমাত্র জরিমানা হবার কারনে একই ব্যবসায়ী বারংবার একই অপরাধে জড়িত হচ্ছে। তাই এ সমস্ত অপরাধের শাস্তি দন্ড, অজামিনযোগ্য ও মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিত।
বক্তাগন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন রাজনৈতিক দলগুলি সাধারন জনগনের জন্য রাজনীতি করেন বলে যেভাবে মুখে ফেনা তুলেন, অথচ খাধ্যে ভেজাল, ফরমালিন মিশ্রন ও ক্যামিকেল প্রদান, দ্রব্যমুল্যের দাম বৃদ্ধি, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, বাস ভাড়া, বাড়ী ভাড়া ইত্যাদি বাড়লে তাদের কোন কর্মসুচী থাকে না। আর হরতাল ও রাজনৈতিক সহিংষু কর্মসুচীতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান, পরিবহন, সার্ভিস আওতা মুক্ত না হবার কারনে সাধারন মানুষের মরার উপর খরার ঘাঁ হিসাবে মুল্য বৃদ্ধির যন্ত্রনা বাড়ছ
মন্তব্য চালু নেই