সফল বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. আতাউল করিম

ট্রেনের কথা বললেই মানসপটে ভাসে লোহালক্কড়, রেললাইন, বগি ইত্যাদি বিষয়। কিন্তু কেউ কি কখনো কল্পনা করেছেন যে, একটি ট্রেন চলবে অথচ ট্রেনের চাকা রেললাইন ছুঁইবে না। কেউ ভাবুক বা না ভাবুক এই বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. আতাউল করিম। আর ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে ঠিক কী করতে হবে তার রূপরেখাও তিনি দেখিয়েছেন। বিশ্বের সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর মধ্যে তিনি একজন।

ট্রেন চলার এই প্রচলিত ধারণার স্থানে এবার যোগ হচ্ছে আতাউল করিমের দেওয়া নতুন ধারণা। চুম্বকের সাহায্যে অনায়াসে চলবে এবং গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবে এ ট্রেন। জার্মানি, চীন ও জাপানে ১৫০ মাইলের বেশি বেগে চলমান ট্রেনের আবিষ্কার হয়েছে। তবে ওই ট্রেনগুলোতে প্রতি মাইল ট্রাক বা লাইনের জন্য গড়ে খরচ হবে ১১০ মিলিয়ন ডলার। আর সেই জায়গায় আতাউল করিমের আবিষ্কৃত এ ট্রেনে খরচ হবে মাত্র ১২-১৩ মিলিয়ন ডলার। দেখতে আকর্ষণীয় এ ট্রেনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি স্টার্ট নেওয়ার পর আর লাইনকে স্পর্শ করবে না।

বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানী এখন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার নরফোকের ওল্ড ডোমিনিয়ান ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু গণমাধ্যমে আতাউল করিমের এই আবিষ্কার নিয়ে নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। নিবন্ধে জানা যায়, ওল্ড ডোমিনিয়ান ইউনিভার্সিটির গবেষকরা গত ৭ বছর ধরে এ ধরনের একটি ট্রেন তৈরির গবেষণায় বিপুল অর্থ ব্যয় করেও কোনো সফলতা পাননি। ভাগ্যদেবী যেন আতাউল করিমের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। ২০০৪ সালে এই প্রকল্পটির দায়িত্ব ড. আতাউল করিমের হাতে আসার মাত্র দেড় বছরের মাথায় ট্রেনটি নির্মাণ করতে সক্ষম হন তিনি। নির্মাণ-পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর নামকরা বিজ্ঞানীরা ট্রেনটিকে বারংবার পরীক্ষা করে দেখেছেন। শেষমেশ সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন যে, এখন এই ট্রেনটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ৩০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান ড. আতাউল করিম।

মোহাম্মদ আতাউল করিম বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের বড়লেখার মিশন হাউজে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আবদুস শুকুর পেশায় ডাক্তার ছিলেন। আতাউল করিম বাংলাদেশি-মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার নরফোকে অবস্থিত ওল্ড ডোমিনিয়ান ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত এই বিজ্ঞানী ইলেকট্রো-অপটিক্সের গবেষণায় অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য।

তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বড়লেখার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, এর পর বড়লেখার বিখ্যাত পিসি হাইস্কুলে পড়লেখা করেন। পরবর্তী সময়ে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে প্রথম শ্রেণীতে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন। ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সিলেট এম সি কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি (অনার্স) ডিগ্রি লাভের পর উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার অব সায়েন্স, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার অব সায়েন্স এবং পিএইচডি করেন ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা থেকে যথাক্রমে ১৯৭৮, ১৯৭৯ এবং ১৯৮১ সালে।

২০০০ সালে তিনি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশলের ডিন হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি নরফোকে অবস্থিত ওল্ড ডোমিনিয়ান ইউনিভার্সিটির তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বর্তমানে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৮টি বই লিখেছেন। এছাড়া আরো ৭টি বইয়ে তিনি ‘পরিচ্ছেদ’ লিখেছেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক নিবন্ধের সংখ্যা ৩৭৫-এরও বেশি। তাঁর নিবন্ধগুলো পৃথিবীর খ্যাতনামা জার্নালসমূহে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত বইগুলো বিভিন্ন দেশে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে পড়ানো হয়। তাঁর বইগুলোর মধ্যে Digital Design: A Pragmatic Approach (১৯৮৭), Electro-Optical Devices and Systems (১৯৯০), Optical Computing: An Introduction (১৯৯২), Electro-Optical Displays (১৯৯২), Continuous Signals and Systems with Matlab (২০০১, ২০০৯), and Digital Design: Basic Concepts and Principles (২০০৮) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ড. আতাউল করিম ১৯৭৭ সালে সহপাঠী সেতারাকে বিয়ে করেন। সেতারা একজন প্রাণরসায়নবিদ। তাঁরা এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক-জননী।



মন্তব্য চালু নেই