সফলরা যেভাবে সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করেন

সময় একটি পণ্য। অনেকের মতে, এটি জীবনের সবচেয়ে দামি পণ্য। সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে খুব দ্রুত সাফল্য লাভ করা যায়। কিন্তু সময় নিয়ে অনেকের মনেই বিভ্রান্তি আছে।

উদ্যোক্তা ব্রায়ান ডি. ইভান্স বিজনেস ইনসাইডারে এ নিয়ে চমৎকার একটি নিবন্ধ লিখেছেন।

ব্রায়ান ডি. ইভান্স লিখেছেন, সময় নিয়ে সবচেয়ে বড় বিভ্রান্তিকর ধারণা হচ্ছে, তুমি সময় বাঁচাতে পারো। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে, তুমি শুধু সময় ব্যয়ই করতে পারো। একবার সময় চলে গেলে সেটি আর কোনোভাবে ফেরত পাওয়া সম্ভব নয় এবং তুমি কোথাও সেটি জমাও রাখতে পারো না। কিন্তু সময় ‘তৈরি’ করা যায়। কীভাবে, সেটি এ নিবন্ধে দেখানো হবে।

রিচার্ড ব্রানসন, অপরাহ উইনফ্রে, বিল গেটস, মার্ক কুবান, এলন মাস্ক, ওয়ারেন বাফেটের মতো সফল ও বিলয়নিয়াররা এসব নিয়ম মেনে চলেন।

১. লক্ষ্যে অবিচল না থাকাটা হচ্ছে সময়ের অপচয়

আপনার লক্ষ্য যদি নির্দিষ্ট না থাকে, তাহলে ফেসবুকে ঢুকে আপনি উদ্দেশ্যহীনভাবে নিউজ ফিড স্ক্রল করতে থাকবেন। এটা বোঝার আগেই আপনি হয়তো কোনো ভিডিওতে বুঁদ হয়ে যাবেন। আপনি এমন কিছুর পেছনে সময় নষ্ট করবেন, যা আপনার উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

ওয়ারেন বাফেটের একটা বিশেষ পদ্ধতি আছে এ ক্ষেত্রে। তিনি মানুষকে তাদের জীবনের ২৫টি প্রধান লক্ষ্যের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেন। এরপর এ ২৫টি লক্ষ্য থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি লক্ষ্য বাছাই করতে বলেন। অনেকে ভাবেন যে, এ পাঁচটি লক্ষ্যের পাশাপাশি অন্যগুলোর দিকেও এক-অাধটু সময় ব্যয় করা যেতে পারে। কিন্তু বাফেট বলেন, যেকোনো মূল্যে বাকি ওই ২০টি লক্ষ্যকে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করুন। আগে প্রধান পাঁচটি লক্ষ্য অর্জন করুন। তারপর সময় থাকলে বাকিগুলোর দিকে তাকান।

২. লক্ষ্যগুলো লিখে রাখলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে শতকরা ৪২ ভাগ

লক্ষ্যগুলো আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপনাকে জানতে হবে, আপনি কী লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছেন, আপনার হাতে কী পরিমাণ সময় আছে এবং আপনি ইতোমধ্যে কি পরিমাণ সময় হারিয়ে ফেলেছেন?

’দ্য সিক্রেট’ বইয়ের লেখক জন আশরাফের মতে, লক্ষ্যগুলো অর্জনের সম্ভাবনা ৪২ শতাংশ বেড়ে যায়, যখন আপনি শুধু সেগুলোকে লিখে রাখবেন। কারণ লিখে রাখলে মনে হবে, আপনার লক্ষ্যগুলো অনেকটাই বাস্তব। উদ্যোক্তারা অন্যতম বড় যে সমস্যাটি মোকাবেলা করেন, সেটি হচ্ছে তারা কোথায় তাদের সময় ও শক্তি ব্যয় করবেন, সেটি বুঝতে পারেন না। নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার পরিবর্তে তারা একসাথে ১০০টি কাজ করতে চান।

তাই আপনি কি করতে চান, সেটি আপনাকে জানতে হবে। যদি আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত থাকেন, তাহলে বিচ্যূত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আপনি যদি সবকিছুই করতে যান, তাহলে দেখবেন আপনার অত সময় নেই, কিংবা কিছুই হচ্ছে না।

৩. দায়িত্ব বণ্টন করে অন্যদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা

এটা অন্যতম কঠিন একটা কাজ, কিন্তু সবচেয়ে লাভজনক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি নিজে নিজেই একটি কাজ শেষ করে ফেলতে চান, তাহলে আপনার হাতে দিনে সময় আছে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু আপনি যদি অতিরিক্ত একজনকে দায়িত্বের অংশীদার করেন, তাহলে আপনার হাতে দিনে সময় আছে ৪৮ ঘণ্টা। মানুষের মধ্যে দায়িত্ব যত বণ্টন করে দিবেন, অাপনার সময়ের পরিমাণও তত বাড়বে, সাফল্যের সম্ভাবনাও বাড়বে।

এখানে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, দায়িত্ব কাদের মধ্যে বণ্টন করব? তাদের কোথায় পাব? রিচার্ড ব্রানসন এ প্রশ্নে সবচেয়ে ভালো জবাবটা দিয়েছেন। তার মতে, ‘কর্মীদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দাও, যাতে তারা যোগ্য হয়ে ওঠে। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করো, যাতে তাদের মধ্যে কোনো শূন্যতাবোধ তৈরি না হয়’।

৪. মানুষের চেয়ে প্রযুক্তিকে বেশি কাজে লাগান

মাঝে মাঝে মানুষের চেয়ে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার বেশি সহজ। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা সব ধরনের কাজই করতে পারে, কিন্তু প্রয়োগের আগে সেটি কার্যকরী হবে কিনা, সেটি নিশ্চিত হতে হবে। কারণ প্রযুক্তির সামান্য সমস্যাও অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

৫. নিয়ম ভাঙতে ভয় পাওয়া যাবে না

সফল ও ধনী মানুষরা নিয়ম ভাঙার জন্য প্রসিদ্ধ। প্রতিটি নিয়ম ভাঙার জন্যই কেউ না কেউ আছে।



মন্তব্য চালু নেই