সন্ধান পাওয়া গেল বিস্ময়কর মানুষ আকৃতির মাছ!

বিশ্বে একদল মানুষ বিবর্তনবাদের পক্ষে, আরেকদল বিপক্ষে। মানুষের জীবনের আদিতত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞান যেভাবে একের পর এক গোপন ঘরের তালা খুলে ফেলছে তাতে আগামীর মানুষের মনস্তত্ত্ব কি হতে পারে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানের কথা বাদ দিলেও প্রকৃতির এমন কিছু অনুষঙ্গ হঠাৎ করেই আমাদের সামনে চলে আসে, যা প্রথম দেখায় আমাদের মাঝে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। যেমন ধরুন, আমাদের আজকের আলোচনার এই মানুষ মাছের কথাই ধরুন। সাহিত্যে-মিথে মৎস্যকন্যাদের কথা থাকলেও বাস্তব দুনিয়ায় এর উপস্থিতিতো পাওয়া যায় না। কিন্তু সম্প্রতি একদল সমুদ্রপ্রাণ বিজ্ঞানী দাবি করেছেন যে, সমুদ্রের একেবারে তলদেশে দুর্লভ ও বিস্ময়কর কিছু প্রাণী আছে, আর এদের মধ্যে একটি হলো ‘প্রোটিয়াস’ বা মানুষাকৃতির মাছ।

সমুদ্র বিজ্ঞানীদের একটি দলকে গাইড করছিলেন মিরান। অক্সিজেন মাস্কের ভেতর দিয়ে প্রায় হঠাৎ করেই মিরান বলে উঠলেন, ‘এই যে, আপনি কি দেখতে পেয়েছেন? এটাই হলো প্রোটিয়াস। এই পসতনজা গুহাতেও এটা খুবই দুর্লভ।’ মিরানের কথায় প্রাণীটি দেখার পর আমাদের স্বীকার করে নিতেই হবে যে, সাদা রংয়ের-ইল মাছ সাদৃশ এই প্রাণীটিকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। স্লোভানিয়ার ওই অঞ্চলে এই প্রাণীকে তাদের শরীরের গড়নের কারণে বলা হয় ‘হিউম্যান ফিস’ বা ‘মানুষ মাছ’। বিস্ময়কর হলো, এক একটি প্রোটিয়াস অনায়াসেই একশ বছরের বেশি বেঁচে থাকে। শুধু তাই নয়, টানা ১৪ বছর তারা না খেয়েও থাকতে পারে। সমুদ্রের তলায় খুবই নিরাপদ স্থানে তারা অবস্থান করে।

জুন ডিসকভারির একটি দল এই মাছের উৎস এবং অপরাপর বিষয়াদির সন্ধানে পৌছান স্লোভানিয়ার পসতোনজা অঞ্চলে। পাথর এবং জিপসামসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থের সন্নিবেশে এই গুহাটি পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ কার্স্ট গুহা ব্যবস্থা। এর ভেতরে যে প্রায় ১৭ মিটার দীর্ঘ কলামগুলো রয়েছে সেগুলো প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হতেও সময় লেগেছে প্রায় ১৪ হাজার বছর। বিচিত্র সব রং আর আকৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই গুহায়। এই পুরো ২৪ কিলোমিটার অঞ্চলের গভীরেই মূলত প্রোটিয়াসদের বসবাস।

HUMAN-FISH

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ প্রস্তুতি আর সময় অতিক্রম করার পর তবেই গুহা অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। গুহার যে প্রান্তে সাগরের তলদেশ মিলেছে সেখান থেকেই শুরু করলেন বিজ্ঞানীরা তাদের অনুসন্ধান। এই অনুসন্ধান করতেই সাহায্য করছিলেন মিরান। তার সহায়তাতেই গুহা ভেতরকার পিভকা নদীর তলদেশে দেখা মেলে প্রোটিয়াস মাছের। বিজ্ঞানীদের দেয়া তথ্য মতে, এই মাছেদের রয়েছে মানুষের মতো দেখতে হাত এবং পা। যা দিয়ে তারা সমুদ্রের তলদেশে সহজেই সাতার কাটা থেকে শুরু করে পাথুরে দেয়ালে আরোহন পর্যন্ত করতে পারে।

মাছটি সম্পর্কে এখনও বিজ্ঞানীরা বিস্তারিত জানতে পারেননি। খুব অল্প সময়ের জন্য মাছটির দেখা মিললেও এর বিস্তারিত জানার জন্য যে সময় দরকার তা পাওয়া যায়নি। তবে ধারনা করা হচ্ছে, ১৮১৮ সালের দিকে যে অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল প্রোটিয়াস সন্ধানে তার তুলনায় এবারের অনুসন্ধান অনেক বেশি কার্যকর এবং তথ্য প্রযুক্তি সম্পন্ন। কারণ, ওরকম বৈরি পরিবেশে ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় তারা শতাধিক বছর বেঁচে থাকে তা মানবজাতির জন্যই জানার প্রয়োজন।



মন্তব্য চালু নেই