সন্তানের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করার ১০টি কৌশল

যেকোন বাবা-মা চান তার সন্তান আত্মবিশ্বাসী হোক, নিজেকে চিনুক, নিজেকে বিশ্বাস করুক। কিন্তু ছোট্টবেলা থেকে অনেক বেশি পরনির্ভরশীলতার কারণে অনেক সময়েই মানুষ বড় হবার পরেও নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেনা এবং পরবর্তীতে এর প্রভাব পরে কর্মক্ষেত্রে। বাস্তব জীবনের খুব ছোট্ট আর কঠোর সত্য হচ্ছে মানুষ একা। তাই দিন শেষে নিজের ছোট ছোট কাজের জন্যেও অন্যের ওপর নির্ভর করা কিংবা অন্যের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে জীবন যাপন করা কেবল কর্মজীবনেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও একজন মানুষকে অন্যের চোখে করে তোলে হাস্যকর। তৈরি করে আরো অনেক বেশি হীনমন্ন্যতা! আর তাই এই সমস্যাকে মোকাবেলা করতে ছোটবেলা থেকেই কিছু সহজ কাজ করার মাধ্যমে করে তুলুন আপনার সন্তানকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী!

১. হেরে যেতে দিন

বাবা-মা কখনোই চান না সন্তান হেরে যাক। আর তাই অনেকেই বুক দিয়ে আগলে রাখেন সন্তানকে। সাহায্য করেন জিততে। এটা ঠিক যে বাবা-মা হিসেবে আপনার না ইচ্ছে করতেই পারে যে সন্তান হেরে গিয়ে কষ্ট পাক। কিন্তু মনে রাখবেন যে হারের মাধ্যমেই মানুষ শেখে। বড় হয়। একবার হারলে মানুষ হারকে মোকাবেলা করার শক্তি পায়। বিপদে পড়ার মাধ্যমে মানুষের আরো বেশি মানসিক শক্তি আড়ে সামনের বিপদকে সরিয়ে দেওয়ার। আর তাই সন্তান কষ্ট পেয়ে কাঁদলে বা হেরে গিয়ে মন খারাপ করলে তাকে সেখান থেকে সরে আসতে না বলে মুখোমুখি হবার সাহস দিন। হয়তো সে আবার হারবে। তারপরও।

২. দায়িত্ব নিতে দিন

আমাদের সমাজে সন্তান কি করবে না করবে সেসবের সিদ্ধান্ত অনেকখানি তার মা-বাবাই নিতে চান। কিন্তু সবচাইতে ভালো হয় যদি আপনার সন্তানকে তার জীবনের সিদ্ধান্ত আপনি নিজেই নিতে দেন এবং বোঝান যে যেহেতু সে এই সিদ্ধান্ত নিজে থেকেই নিছে সুতরাং এর ফলাফলটাও পুরোপুরি তার। এতে করে সন্তান নিজের সিদ্ধান্ত নেবার মতো মানসিক শক্তি অর্জন করবে আর যে কোন কাজের ফলাফল কেমন হতে পারে সে সম্পর্কেও ধারণা পাবে।

৩. সাহায্য করতে অনুপ্রেরণা দিন

যেকোন শিক্ষা সেটা ঘর তেকেই শুরু হওয়া উচিত। আর তাই আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্যে ঘরের কাজকর্মে সাহায্য করতে অনুপ্রেরণা দিন সন্তানকে। হতে পারে সেখানে প্রতিযোগিতার ব্যাপারও থাকতে পারে। এতে করে আপনার সন্তান কেবল অনেক রকমের কাজই শিখবে না, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব আর সাহায্য করার ইচ্ছাকেও নিজের ভেতরে ধারণ করবে।

৪. চ্যালেঞ্জ করুন

সন্তানকে চ্যালেঞ্জ করুন। হতে পারে সেটা ঘরের কোন ব্যাপারে কিংবা স্কুলের কোন খেলায়। এতে করে সে শিখবে নিজের শক্তিতে কি করে আরো ভালো অবস্থানে যাওয়া যায় এবং তাও আর সবাইকে নিয়ে। আর সে ভালো কিছু করলে সেটাকে উদযাপনও করুন।

৫. দায়িত্ব দিন

ঘরের ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতে সন্তানকে দায়িত্ব দিন। সেটা হতে পারে বাইরে খেতে যাওয়া বা মুভি দেখার মতো বিষয়। এতে করে আপনার সন্তান সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাবে।

৬. শখকে উত্সাহ দিন

সন্তানের অনেক রকমের শখ থাকতে পারে। হতে পারে সেটা ডাকটিকিট সংগ্রহ করা কিংবা বই পড়া। তাকে নিজের শখকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে উত্সাহ দিন। এতে করে সে মুক্তভাবে নিজের ইচ্ছেমতন কাজ করতে ও সেই ক্ষেত্রে অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতামূলক কাজের মাধ্যমে চারপাশকে আরো ভালো করে জানার সুযোগ পাবে।

৭. সন্তানের কথা শুনুন

হতে পারে সেটা ছোট কোন ব্যাপার কিংবা আপনি তার কথা পুরোপুরি বুঝতে পারছেন না। তবুও সন্তানের পুরো কথাটা মনযোগ দিয়ে শুনুন। তার কথা কেউ গুরুত্ব দিয়ে শুনছে এটা বুঝতে পারলে নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়বে তার। শুধু তাই নয়, শোনার পাশাপাশি আপনি নিজেও তাদেরকে বলুন আপনার কথাগুলো।

৮. সত্যিটা জানান

হয়তো আপনার সন্তান অন্যদের চাইতে কিছু একটা কম পারে বা কোন দিক দিয়ে খানিকটা পিছিয়ে আছে। মোটেই তাকে বড় বড় কথা বলে মন ভারো করার চেষ্টা করবেন না। কারণ সেটা হয়তো খানিক সময়ের জন্যে তার মন ভালো করে দেবে। এর চাইতে বরং তাকে সত্যিটা বলুন যে আসলেই সে খানিকটা পিছিযে রয়েছে সেই ব্যাপারটাতে বন্ধুদের চাইতে এবং আরেকটু চেষ্টা করলে অনেক বেশি ভালো করতে পারবে।

৯. তুলনা করা বন্ধ করুন

ভালো বা খারাপ কারো সাথেই সন্তানের তুলনা করতে যাবেন না সন্তানের। সেটা কেবল সন্তানকে অনেক সময় কষ্টই দেয়না। প্রশংসার অন্ধকারে তলিয়ে ফেলে যেখান থেকে সে নিজে কখনো বেরিয়ে আসতে পারেনা। আর তাই কেবল অন্য কারো ভালো বা খারাপ অবস্থানের কথা উল্লেখ করুন। তুলনা নয়। সেটা আপনার সন্তান নিজেই করে নেবে।

১০. স্থান দিন

পরিবারের ছোট্ট সদস্য হলেও সে যে আপনাদের ভেতরে অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে এবং তার উপস্থিতি যে আপনাদের জন্যে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝাতে পারিবারিক যে কোন আলোচনাতেই সন্তানকে রাখুন। তাকেও নিজের মতামত প্রকাশ করার জায়গা দিন।

তথ্যসূত্র- লাইফহ্যাক



মন্তব্য চালু নেই