নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে তাজউদ্দিন কন্যা শারমিন
সত্য উচ্চারণ করলেই রাজাকার বলা ভয়ঙ্কর প্রবণতা
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক তাজউদ্দিন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখিকা শারমিন আহমদ বলেছেন, “বাংলাদেশে কারো কথা পছন্দ না হলেই বা কেউ সত্য উচ্চারণ করলেই তাকে রাজাকার আলবদর কিংবা স্বাধীনতাবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করার এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা দেশকে মারাত্মক বিপদের জায়গায় নিয়ে যাবে।”
শনিবার নিউ ইয়র্কে জেলহত্যা দিবসের ওপর এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের সাবেক বামপন্থী ছাত্রনেতাদের সংগঠন প্রগেসিভ ফোরাম অফ ইউএসএ আয়োজন করে এই আলোচনার। সংগঠনটির সভাপতি খোরশেদুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন উপদেষ্টা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শারমিন আহমদ বলেন, “অজ্ঞাত এক ভীতির কারণে বাংলাদেশে সত্য উচ্চারণ করতে না দেয়ার একটা সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থে খণ্ডিত ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে সত্যিকার ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি। অথচ একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অখণ্ড ইতিহাস জানার সুযোগ সৃষ্টি করাটা সবচেয়ে জরুরি। সত্য প্রশ্ন উচ্চারণের সুযোগ থাকতে হবে।”
তিনি বলেন, “কোনো দেশে যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার অবাধ সুযোগ না থাকে, তাহলে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কখনো টেকসই হয় না। টেকসই উন্নয়নের জন্য অবশ্যই মুক্তিবুদ্ধি চর্চার অবারিত সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ”
জেলাহত্যার বিচার নিয়ে নিজের অসন্তোষ ও হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় একই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে জেলখানায় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। অথচ জেল হত্যার কথিত বিচারে এমন কয়েক ব্যক্তিকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো, যারা কেউই দেশে নেই। এছাড়া তারা খুবই অপরিচিত এবং সেনাবাহিনীর নিম্নপর্যায়ের সদস্য। এই হত্যার সঠিক বিচার করতে হলে তৎকালীন আইজি প্রিজন ও ডিআইজি প্রিজনকেও আসামি করা উচিত ছিল। কারণ, কারাগারের প্রত্যেক বাসিন্দার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত ছিল।”
তিনি বলেন, “জেল হত্যাকাণ্ডের হোতারা দেশের বাইরে ছিল। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতির সুযোগ করে দেয়। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই এরশাদ আজ বর্তমান সরকারের অংশীদার। ”
নিজের লেখা বই ‘ তাজউদ্দিন আহমদ : নেতা ও পিতা ’ প্রকাশের পরবর্তী অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে শারমিন আহমদ বলেন, “বইটি না পড়েই ঢালাও সমালোচনা করা হলো। খোদ মন্ত্রী পর্যায় থেকে বলা হলো যে, এ কে খন্দকারের বই ও শারমিন আহমদের বই একই জায়গা থেকে লেখা হয়েছে। অথচ আমি কেবল অনলোচিত ও গবেষণালব্ধ সত্যি ইতিহাসগুলোই তুলে ধরেছি মাত্র।”
তিনি জানান, শিগগির তার আরেকটি বই প্রকাশিত হবে জেলহত্যার পূর্বাপর নিয়ে।
মন্তব্য চালু নেই