সঙ্কট রোগে ভুগছে খুমেক হাসপাতাল

দালাল চক্র ও মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের দৌরাত্মে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালটি অস্থির হয়ে আছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সদের অভাব এই প্রতিষ্ঠানটির দৈন্যদশা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এর ফলে রোগীরা প্রতিনিয়ত নানা সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছেন। সবমিলিয়ে হাসপাতালটি নানাবিধ সঙ্কট রোগে ভুগছে।

খুলনা বিভাগের মধ্যে বড় ও নির্ভরযোগ্য এ হাসপাতালটির প্রতি মানুষের প্রত্যাশা যেমন আকাশচুম্বি, তেমনি দুর্ভোগও আকাশছোঁয়া। প্রতিদিনই কয়েকশ রোগী এখানে ভর্তি হয়। এ সময় ওৎ পেতে থাকা দালালরা রোগীর স্বজনদের পরামর্শ দিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকগুলিতে রোগী পাচার করে। চিকিৎসক, কর্মচারী ও দালালদের সমন্বয়ে হাসপাতালে তৈরি হয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। এদের মাধ্যমে হাসপাতালের আশপাশে তাদেরই নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন।

হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পছন্দের প্যাথলজি কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে কমিশন বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসা করে থাকেন।

হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান লিটন জানান, এক শ্রেণীর টাউট ও দালালচক্র সবসময় হাসপাতাল গেটে ওৎ পেতে থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা হাসপাতালে এলেই দালালচক্র তাদের ওপর হামলে পড়ে। এ চক্রের হাতে প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছেন রোগীরা।

শরিফুল ইসলাম সেলিম জানান, হাসপাতালকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দালাল চক্রের সঙ্গে রয়েছে হাসপাতালের পাশে ও মহানগরীর নামীদামি ক্লিনিকগুলোর সুসম্পর্ক। হাসপাতালের বহির্বিভাগে অথবা জরুরি বিভাগে কোনো রোগী আসলেই শুরু হয়ে যায় দালাল চক্রের আনাগোনা। এ চক্রের সদস্যরা রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে বাইরে চিকিৎসা নিতে প্ররোচিত করেন। কোনো ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যেতে পারলে দালালরা ওই ক্লিনিক থেকে কমিশন পেয়ে থাকেন।

দালালচক্রের পাশাপাশি হাসপাতালে পেশাদার রক্তদাতারাও সক্রিয়। বেশিরভাগ রক্তদাতাই মাদকাসক্ত। যারা দীর্ঘদিন ধরে লাল রক্তে কালো ব্যবসা করছেন। পেশাদার এসব রক্তদাতার রক্ত মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতি ব্যাগ রক্ত তারা ৩শ টাকা থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি করেন। পেশাদার রক্তদাতা ছাড়াও হাসপাতাল এলাকার বিভিন্ন ওষুধের দোকান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এমনকি খাবারের হোটেলেও রক্ত পাওয়া যায়।

বহির্বিভাগ বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কোনো রোগীর ব্যবস্থাপত্রের প্রতি রিপ্রেজেন্টেটিভরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কী ওষুধ লিখল এটি তাদের জানা চাই। কখনও কখনও রোগীর স্বজনদের কাছ এরা ব্যবস্থাপত্র ছিনিয়ে নেন। মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রেও এর কোনো ব্যতিক্রম হয়না।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জনবল সঙ্কটের কারণে রোগীদের কাঙ্খিত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না। ২শ ৫০ বেডের জনবল নিয়ে প্রতিদিন ভর্তিকৃত ৮ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। তাছাড়া বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। চিকিৎসক সঙ্কটে ইন্টার্নি চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় থাকে না।’

মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের আনাগোনা ও দালালদের দৌরাত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ১ জুলাই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ৫শ শয্যায় উন্নীত করার জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়। অথচ আজও হাসপাতালটি সে অনুপাতে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। অনুমোদিত জনবল ৭শ ৬০ জনের স্থলে আছে মাত্র ৩শ ৩৪ জন। ৪শ ২৬টি পদ শূন্য রয়েছে। কবে পূরণ হবে, বা আদৌ পূরণ হবে কি-না তা কেউই জানেন না।



মন্তব্য চালু নেই