সংসদ নির্বাচন হবে নারায়ণগঞ্জের মতো : কাদের

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ। বলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ জন্য ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রোববার দুপুরে দুপুরে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় যৌথ কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। যৌথ কর্মীসভায় রংপুর বিভাগের আট জেলার ৫৪ উপজেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখল, বিরোধীদের বাধা দেয়ার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন ও সরকার। তবে গত ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে বিএনপিও কোনো আপত্তি জানায়নি। দিনভর নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলে দলটি। কিন্তু ভোটের ফল বিপক্ষে যাওয়ার পর দলের নেতারা নানা প্রশ্ন তুললেও সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ তারা জানাতে পারেননি। আর এ নিয়ে পরে আর উচ্চবাচ্য করেনি দলটি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও নারায়ণগঞ্জের মতোই শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হবে বলে নিশ্চয়তা দেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করেছে। এটা আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার।

নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে গঠিত সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপির দুই নেতার দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, তাদের অবস্থানের তো কোনো ঠিক নেই। এক নেতা বলেন তিনি আশাবাদী আরেক নেতা বলেন তিনি হতাশ।

গত বুধবার গঠিত সার্চ কমিটির ছয় সদস্যের মধ্যে বিএনপি পাঁচ জনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে দলের এই অবস্থান তুলে ধরেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরদিন রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই সার্চ কমিটির কাছে তারা কিছু আশা করছেন না।

তবে একই দিন আরেক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ বলেন, সার্চ কমিটির কাছ থেকে তিনি ভালো কিছু আশা করছেন।

শনিবার সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া ৩১টি দলের কাছ থেকে নাম চাওয়া হয়। এরই মধ্যে বিএনপি নাম জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, তাতে আওয়ামী লীগের পুর্ন সমর্থন থাকবে। তিনি বলেন, বিএনপির একজন নেতা সার্চ কমিটির সদস্যদের নিয়ে আশাবাদি, আরেক নেতা হতাশ। তাদের কথা ও কাজে কোন মিল নেই।

সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে দলের অগ্রাধিকার সবসময় বেশি থাকবে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে হারাতে পারে না। সরকার হারাবে আওয়ামী লীগের মধ্যে।’

দলে জায়গা দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘ খারাপ লোককে দলে আনবেন না। খারাপ লোক এনে দল ভারী করবো- এই আওয়ামী লীগ আমরা করি না। এমন আওয়ামী লীগ আমরা চাই না।’

দলের কমিটি করার ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থ দেখা যাবে না মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা কমিটি করতে গিয়ে পকেট কমিটি করবে, এমন আওয়ামী লীগারের কোন প্রয়োজন নেই। পকেট কমিটি হারিয়ে যাবে। দলে নেতা উৎপাদন নয়, কর্মী উৎপাদন করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গিকর কবির নানকের সভাপতিত্বে সভায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, বস্ত্র ও পাটপ্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, টিএম মুনশী, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, মহানগর সভাপতি শাফিয়ার রহমান শফি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন ।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আচরণে জনগণ যেন বিরক্ত না হয় সে দিকে নজর রাখার তাগিদ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন,‘বঙ্গবন্ধুর মতো, শেখ হাসিনার মতো মানুষের ভালোবাসার ফুল অর্জন করুন। সেই ফুলই রয়ে যাবে। সেই ফুলই থেকে যাবে।’

কী দিয়ে ভালোবাসা অর্জন করা যাবে-তাও বলে দেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘আপনার ভালো আচরণ দিয়ে। মানুষের দুঃখ কষ্টে মানুষের পাশে থেকে। বিপদে আপদে নিঃস্ব অসহায় মানুষকে সাহায্য করবেন। এই ভালোবাসা থেকে যাবে।’

সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ এখন দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘একে প্রতিহত করতে হবে। পরাজিত করতে হবে।’



মন্তব্য চালু নেই