‘সংলাপ করতে পারেন না, তাহলে পারেন কী?’

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর বলেন, ‘বোমাবাজদের ধরতে পারেন না, সংলাপ করতে পারেন না, তাহলে পারেন কী? কথা বলতে আপনাদের সমস্যা কোথায়?’

তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রথম রূপ হলো বিরোধী দলকে কাছে নিয়ে আসা। ভারত, আমেরিকায় বিরোধী দলকে যেভাবে অভিনন্দন জানানো হয়, কথা বলা হয়। সেভাবে আমাদের দেশে কেন হয় না?’

রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায় বিবিসি-বাংলাদেশ সংলাপে দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর এ সব কথা বলেন।

শাহজাহান ওমরসহ বিবিসি সংলাপে আলোচক ছিলেন— আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম কাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী।

আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘গণতন্ত্রে সংলাপের বিকল্প নেই। একটা সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমরা কার সঙ্গে সংলাপ করব, বোমাবাজদের সঙ্গে?’

বোমাবাজদের কাছে আত্মসমর্পণ করে সংলাপ সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

আব্দুল মতিন খসরুর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, ‘আপনি বলছেন সংলাপ সম্ভব নয়, তাহলে সংলাপের জন্য তলে তলে আপনাদের লোক সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদাকে পাঠিয়েছেন কেন?’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম কাদের বলেন, ‘দেশ ভয়ঙ্কর শোচনীয় অবস্থায় পড়েছে। এ অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য অবশ্যই সংলাপ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।’ খুব শিগগিরই একটা সমাধান বের হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থা সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে বের হতে সংলাপের বিকল্প নেই।’

সহিংসতা কবে বন্ধ হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে মতিন খসরু বলেন, ‘শুধু বিজিবি-পুলিশ বাহিনী দিয়ে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। এর জন্য জনগণের সহযোগিতা লাগবে।’

সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস আর বাকি পাঁচ দিন ছুটি, এ অবস্থা আর কতদিন চলবে— দর্শকের এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘এর উত্তর শেখ হাসিনা দেবে। আমরা তো হরতালে বাস-যানবাহন বন্ধ থাকতে বলেছি। হাঁটা তো নিষেধ করিনি।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ-র‌্যাবের প্রধানরা বড় বড় লেকচার দেন কেন, তারা সহিংসতাকারীদের ধরুক।’

মতিন খসরু বলেন, ‘যে যা বলিস ভাই, আমি আমার সোনার হরিণ চাই।’

সংহিসতার খবর গণমাধ্যমে দেখানোর বিষয়ে দর্শকের এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ তো বিএনপি বা খালেদা জিয়া করছে না। মিডিয়াকে একটা প্রেস রিলিজ দেয় তারা। গণমাধ্যমগুলো এ নিয়ে খবর প্রকাশ-প্রচার করে। সহিংসতার খবর বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ।’

শাহজাহান ওমর বলেন, ‘একটা হরতাল দেওয়া হলে জনগণ তা জানবে কিভাবে। মিডিয়ার মাধ্যমেই তো জানবে। সুতরাং মিডিয়ার প্রচার বন্ধ করানো হলে সেটা ঠিক হবে না।’

তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘আসল সমস্যার সমাধান আগে করতে হবে। খবর দেখানো বন্ধ করে লাভ হবে না। মানুষকে দেশের পরিস্থিতি জানতে দিতে হবে।’

সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে দর্শকের প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘সৌদির লোকেরা বর্বর। তাই সৌদিতে নারীদের পাঠানো বন্ধ করে দিতে হবে। যখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সৌদিতে নারী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে তখনই বাংলাদেশ থেকে লোক নিতে চাইছে।’ বাংলাদেশেই নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের বেশি সুযোগ সৃষ্টি করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘সৌদিতে নারীদের পাঠানোর আগে সরকার নিরাপত্তার বিষয় নিশ্চিত করবে। দেশে হোক আর বিদেশে হোক নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে।’

তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘সৌদি আরব এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ নিরাপত্তার দিক দিয়ে এটি ঝুঁকিপূর্ণ। এ বাজারে আমরা প্রবেশ করতে পেরেছি, এটা ইতিবাচক। তবে সেখানে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে শেল্টার হোম এবং প্রতি মাসে যোগাযোগের একটি এক্সেস দিতে হবে।’

মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম কাদের বলেন, ‘আমাদের দেশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় হতে হবে এবং তাদের সৌদি আরবের কোন স্থানে পাঠানো হচ্ছে, সে ব্যাপারে যথাযথ তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।’



মন্তব্য চালু নেই