সংরক্ষিত হয়নি নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত হাসপাতাল কক্ষ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী আজ। দেশের যে কয়টি স্থান বিদ্রোহী কবির স্মৃতি বিজড়িত, তৎকালীন পিজি হাসপাতাল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। শেষ দিনগুলোয় অসুস্থ কবির চিকিৎসা হয়েছিল এখানেই।
যে কক্ষটিতে কবি ছিলেন তা সংরক্ষণে বারবার সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তাবায়িত হয়নি। এটি এখন একটি প্রশাসনিক কক্ষ মাত্র।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বিশেষ উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতিতে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। এরপর কবির বাকি জীবন কাটে বাংলাদেশেই। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি’লিট উপাধিতে ভূষিত করে। কবিকে নাগরিকত্বও দেয় বাংলাদেশ। পরে একুশে পদকেও ভূষিত করা হয় কবিকে।
কিন্তু বিশেষ চিকিৎসা সত্ত্বেও দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত কবির স্বাস্থ্যের অবনতি ঠেকানো যায়নি। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে তৎকালীন পিজি হাসপাতালের একটি কক্ষে। কিন্তু জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত সেই কক্ষটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করেনি। দেয়ালে কবির দুয়েকটি ছবি টাঙ্গানো ছাড়া কোনো স্মৃতিচিহ্নও নেই।
এ ব্যাপারে ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ‘আমরা উদ্যোগটা নিতে চাই। কিন্তু এখানে অনেক ব্যস্ততা থাকে। তাই অন্য কোনো পক্ষ থেকে যদি উদ্যোগটা নেয়া হতো তবে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। তারপরও আমরা নিশ্চয়ই আমাদের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’
হারিয়ে যাওয়ার আগেই নজরুলের স্মৃতি সংরক্ষণ জরুরি বলে মনে করেন নজরুল গবেষকরা। নজরুল গবেষক ড. আবুল আজাদ বলেন, ভারতের বহরমপুর জেলে দো’তলায় পাশাপাশি দু’টো কক্ষের একটিতে নেতাজীকে, অন্যটিতে কাজী নজরুলকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। সেখানে মার্বেল পাথরে খোদাই করে লেখা আছে: এই কক্ষে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ব্রিটিশ সরকার বন্দি করে রেখেছিল। তাদের সম্মানে ওই দু’টি কক্ষ এখনো ব্যবহার করা হয় না।
‘তাহলে আমরা কেন পারবো না?’ প্রশ্ন তোলেন তিনি, ‘হাসপাতালে কি কক্ষের অভাব আছে?’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে এই উদ্যোগের সহযোগী হতে চায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমাদের বিশেষজ্ঞরা সেখানে গিয়ে কক্ষটি কীভাবে সাজানো সম্ভব সেটি দেখে এলে একটা ব্যবস্থা করতেই পারি আমরা।’
প্রতিটি দেশই তাদের কৃতি সন্তানের স্মৃতি সংরক্ষণে বিশেষ মনোযোগী। আগামী প্রজন্মের কাছে জাতীয় কবির আদর্শ, ধ্যান-ধারণা তুলে ধরতে প্রয়োজন তাকে নিয়ে গবেষণা এবং তার সব স্মৃতি সংরক্ষণ।
মন্তব্য চালু নেই