জমি নিয়ে বিরোধ

সংঘর্ষকালে ধাওয়ায় মৃত্যু, ওসিসহ আহত ১৫

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় ধাওয়ায় এক ব্যক্তি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন।

সোমবার বিকেলে কাপাসিয়া উপজেলার কড়িহাতা ইউনিয়নের কবির বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।

পুলিশ জানায়, বিকেলে কবির বাজার এলাকায় বিরোধপূর্ণ জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে যান স্থানীয় কবির হোসেন ও তার লোকজন। এসময় তার প্রতিপক্ষ মুজিবুরের লোকেরা বাধা দেয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এসময় বেশ কয়েকজন আহত হন।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে বিক্ষুব্ধরা পুলিশের ওপর চড়াও হন। এসময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে ঘটনাস্থলে সাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।

হামলায় কাপাসিয়া থানার ওসি আহসান উল্লাহ, নির্মল, বেলায়েত হোসেনসহ পাঁচজন আহত হন। পুলিশের রিকুইজিশনের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এ ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের সহযোগিতায় প্রতিপক্ষের ধাওয়াতেই জাকির হোসেন সাকিরের (৪০) মৃত্যু হয়। সাকির কড়িহাতা পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে ও কবিরের বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও মৃত সাকিরের বড় বোন মার্জিয়া জানান, তার ছোট ভাই রাসেল ও রুবেলের নামে প্রতিবেশী মজিবুর রহমান একটি সাজানো বাড়ি পোড়ানোর মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামি গ্রেপ্তার করতে মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগিরা কাপাসিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মমিন সিরাজীর সঙ্গে তাদের বাড়িতে ঢোকে। তারা বাড়ির গেটে হামলা করে ও জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে। বাড়িতে থাকা সাকিরকে পুলিশ ও মুজিবুরের সহযোগিরা এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। পরে পুলিশ সাকিরকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে সে পালিয়ে যাওয়ার সময় মুজিবুর ও পুলিশের লোকজন ধাওয়া করে। এসময় সে পার্শ্ববর্তী কড়িহাতা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে লুটিয়ে পড়ে। সেখানেও তাকে এলোপাতাড়ি পেটানো হলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে স্বজনরা তাকে হাসপাতাল নিতে চাইলে পুলিশ ও মুজিবুরের সহযোগিরা বাধা দেয়। জাকির কোনো মামলার আসামি ছিল না।

এলাকাবাসী জানায়, জ্ঞান হারানোর পর সাকিরের মৃত্যু হয়েছে বলে এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ খবরে এলাকার নারীরা পুলিশ ও মুজিবুরের লোকদের ধাওয়া করে। পরে পুলিশের সঙ্গে মুজিবুরের লোকজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে কাপাসিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মমিন সিরাজী জানান, পুলিশের ধাওয়া করার বিষয়টি সঠিক নয়। মুজিবুর ও সাকিরদের মধ্যে জমি-জমা সংক্রান্ত পাল্টাপাল্টি মামলা রয়েছে। দু’পক্ষই ঘটনার দিন দা-লাঠি নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় পার্শ্ববর্তী কবিরের বাজারে বসে চা খাচ্ছিলাম। সংঘর্ষের কোনো ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য কড়িহাতা গ্রামে যাওয়ার পর আমরা কাউকে পাইনি। সাকিরকে কাপাসিয়ার শীতলক্ষা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছে। পুলিশকে ধাওয়া করা ও পালিয়ে আসার ঘটনাও ঠিক নয়।

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ জানান, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত ছাড়া কিছু বলা সম্ভব নয়।



মন্তব্য চালু নেই