বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ

শ্রীলংকাকে হারিয়ে শুভ সূচনা বাংলাদেশের

জাতীয় দলের নামে শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে ৪-২ গোলের কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। গোল পেয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন রনি (দুটি), নাবীব নেওয়াজ জীবন এবং ইয়াসিন খান। প্রথমার্ধে বাংলাদেশের মাঝমাঠ বেশ নজর কাড়ে। সেন্টার মিডফিল্ডে মামুনুল-জামাল প্রচুর পাস খেলে শ্রীলঙ্কার ডিফেন্সকে ভড়কে দেন। অন্যদিকে দুই আউট সাইড মিডফিল্ডারের মধ্যে ডান দিকে খেলা জাহিদ হোসেন লঙ্কানদের রক্ষণে বারবার ত্রাস ছড়ালেও বাঁ দিকের সোহেল রানা ছিলেন নিষ্প্রভ।

দ্বিতীয়ার্ধে শ্রীলঙ্কা বেশ গোছানো ফুটবল খেলে। মাঝমাঠে শক্তি বাড়ায় তারা। বাংলাদেশের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারদের ব্লক করার চেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো। সুফলও পায় দলটি। আউট সাইড মিডফিল্ডে বলের যোগান কমে যায়। বেশ বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।

তবে প্রথমার্ধের চিত্র ছিল একেবারে ভিন্ন। এ সময় ৩-১ গোলে এগিয়ে ছিল মারুফুলের ছেলেরা। শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে মামুনুল-জাহিদরা। ৩ মিনিটের মাথায় আউট-সাইড মিডফিল্ড থেকে ওভারল্যাপ করে উপরে উঠে যান জাহিদ হোসেন। বল বক্সে প্লেসও করেন। কিন্তু ফরওয়ার্ড জীবন টোকা দিতে ব্যর্থ হন।

১১তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে দারুণ এক চিপে ডান উইংয়ে বল তুলে দেন জামাল ভুঁইয়া। ভালো পজিশনে ছিলেন জাহিদ। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন। বল ঠিকমতো ধরতে পারলে গোলের সুযোগ পেত বাংলাদেশ।

১৭তম মিনিটে রনির গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ওই আউট সাইড মিডফিল্ড থেকে বল নিয়ে উপরে ওঠেন জাহিদ। মাটি কামড়ানো পাসে বল বক্সে প্লেস করেন। বাঁ দিক থেকে বলে যান রনি। টোকা দিয়ে গোল আদায় করে নেন।

২০ মিনিটের মাথায় নাসিরের ফাউলে পেনাল্টি পায় শ্রীলঙ্কা। দৃষ্টিকটু ভুল করেন ‘অভিজ্ঞ’ নাসির। আগুয়ান ফরওয়ার্ডকে পেছন থেকে পায়ে মারেন তিনি। শ্রীলঙ্কার স্ট্রাইকার গোলরক্ষক সোহেলকে বাম দিকে পাঠিয়ে দলকে সমতায় ফেরান।

২৩তম মিনিটে মামুনুলের কর্নার থেকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় পোস্টের আকাশে বল তুলে দেন মামুনুল। সোহেল লাফিয়ে বলের নাগাল না পেলে তা চলে যায় ইয়াসিনের মাথায়। কোমর নিচু করে আলতো হেডে দলকে এগিয়ে দেন তিনি।

৩৩তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন নাসিরুল ইসলাম। লঙ্কানদের বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে মামুনুলের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান খেলে বক্সে ঢুকে পড়েন। মামুনুল টোকা দিয়ে বল বক্সে রাখেন। ততক্ষণে গোলরক্ষক বলে চলে আসার চেষ্টা করেন। গোল খালি! মামুনুলের টোকায় একটু জোর হয়ে যায়। বলের নাগাল পেতে ব্যর্থ হন নাসিরুল। তিনি বলে যেতে পারলে গোল পেতে পারত বাংলাদেশ।

৪৩তম মিনিটে ফের ব্যবধান বাড়ায় বাংলাদেশ। বক্সের ডান দিকে সোহেল রানা বল নিয়ে ঢোকার সময় হাত দিয়ে বল ঠেকান লঙ্কান ডিফেন্ডার। সেট পিস নিতে এগিয়ে আসেন জাহিদ। ডান পায়ের শটে শ্রীলঙ্কার মানবদেয়াল পার করেন। তরুণ স্ট্রাইকার জীবন ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে গোল আদায় করেন।

৫১তম মিনিটে ব্যবধান কমায় সাঞ্জিবা। জামাল ভুঁইয়ার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন। ডিফেন্স তখন অগোছালো। মামুনুল-ইয়াসিন অবশ্য পাশেই ছিলেন। কিন্তু কেউ বলে যাননি। সাঞ্জিবা প্রথম পোস্ট থেকেই গাল আদায় করে নেন।

৫৫তম মিনিটে দলীয় চতুর্থ গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন জীবন। রনি ডান দিক থেকে বল পাঠান। গোলরক্ষকের সামনে ‘অরক্ষিত’ জীবন বলে পা লাগাতে ব্যর্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান।

৭২তম মিনটে তো প্রায় সমতায়ই ফিরছিল লঙ্কানরা। সোহেল ঠিক মতো বার ছেড়ে বেরিয়ে এসেও ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন। ভাগ্য ভালো বল গোলমুখে না এসে সাইড লাইন দিয়ে চলে যায়! দুই মিনিট বাদে আরেকবার গোল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় তারা। কর্নারের সময় গোললাইনে দাঁড়ানো নাসিররুল ইসলাম কোনোমতে হেড করে দলকে বিপদমুক্ত করেন।

৭৭তম মিনিটে জামালের কাছ থেকে ফাঁকায় বল পেয়েও গোলরক্ষককে বিট করতে ব্যর্থ হন স্ট্রাইকার রনি। বাঁ পায়ে শট নিলেও দক্ষতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হন। গোলরক্ষককে নজরে রেখে চিপ করতে পারলে ব্যবধান বাড়তে পারত। দ্বিতীয়ার্ধে জীবন উঠে যাওয়ায় বদলি হিসেবে নামেন মোনায়েম রাজু। এসময় বাংলাদেশের অ্যাটাকিং মিড ফিল্ডের প্রথমার্ধের ছন্দ কাটতে সক্ষম হয় লঙ্কানরা। মাঝমাঠ থেকে বলের সাপ্লাই কমে যায়।

৮৬তম মিনিটে ‘পড়ে পাওয়া’ গোলে ব্যবধান বাড়ে বাংলাদেশের। সোহেলের গোলকিক সরাসরি চলে যায় লঙ্কানদের বক্সে। ওখানে ছিলেন রনি। গোলরক্ষক এগিয়ে এসে বল রিসিভ করতে যান। লঙ্কানদের এক ডিফেন্ডার গোলরক্ষককে না দেখে হেড দিয়ে বল গোলে দেন! ভেবেছিলেন সতীর্থ গোলরক্ষক লাইনে আছেন। রনি ততক্ষণে সেখানে চলে যান। হেসেখেলে বল জালে পাঠান তিনি। বাকি সময়টুকু রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে কাটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের ব্যর্থতা আর শেষ সময়ের বাজে গোল হজম আপসোস বাড়ায় লঙ্কানদের।



মন্তব্য চালু নেই