শ্রীমঙ্গলে ১২০ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ভূনবীর স্কুল এন্ড কলেজ

সৌরভ আদিত্য, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধিঃ দশ যুগ বয়সের বিশাল মাইলফলক পার হয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ভূনবীর দশরথ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি যুগে যুগে শিক্ষার আলো বিস্তার করে এখন পর্যন্ত সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে অনেক কীর্তির স্মৃতি ধারণ করে।

শ্রীমঙ্গল শহর হতে ১৬ কি.মি দূরবর্তী ২নং ভূনবীর ইউনিয়নের ভীমসী গ্রামে ভূনবীর দশরথ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে অবস্থান। প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রকাশিত শতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ এবং এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ১৮৯৬ সালে ভূনবীর গ্রামের কালীকুমার দত্ত সরকারি অর্থ সহায়তায় এলাকাবাসীর ইংরেজি শিক্ষার জন্য তার নিজ বাড়িতে ‘ভূনবীর এমই স্কুল’ নামে এটি প্রথম চালু করেন। তখন দত্ত পরিবারের তত্ত্বাবধান ও অর্থ সহায়তায় স্কুলটি পরিচালিত হতো। পরবর্তীতে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত ভূনবীর চৌধুরী বাড়িতে স্কুলটি চালু ছিল। ১৯১৬ সালে আগুনে পুড়ে গেলে ভীমসী গ্রামের মুরারী গুপ্তের বাড়িতে এটিকে স্থানান্তর করা হয় এবং দত্ত পরিবারের অর্থ সহায়তায় ১৯২০ সাল পর্যন্ত স্কুলটি ওখানে চালু ছিল। এক পর্যায়ে অর্থ সংকট ও ব্যবস্থাপনার দুর্বল পরিস্থিতিতে ভীমসী গ্রামের জমিদার ব্রজনাথ দাস চৌধুরী তার সাহায্যের হাত প্রসারিত করেন এবং প্রয়াত বাবা দশরথ দাস চৌধুরীর নামে নামকরণের শর্তে নিজের দান করা ৩ দশমিক ২৯ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তর করেন। তখন এর নাম ছিল ভূনবীর দশরথ মধ্য ইংরেজী বিদ্যালয়। প্রাচীনত্বের হিসাবে এটিকে মৌলভীবাজার জেলার তৃতীয় হিসাবেও বিবেচনা করা হয়। ১৯২৩ সালে তদানীন্তন আসাম সরকারের ১ হাজার ৮শ’ টাকার মঞ্জুরি পেয়ে ব্রজনাথ দাস চৌধুরী নিজে বাকি টাকার যোগান দিয়ে নিজ উদ্যোগে কাঠের খুঁটি ও টিনের ছাউনিতে মূল বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করেন, যা আজও দাঁড়িয়ে আছে।

প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মাথায় অর্থাত্ ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি তদানিন্তন আসাম সরকারের শিক্ষা বিভাগের স্বীকৃতি লাভ করেছিল। প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন বরিশালের দীনেশ রঞ্জন ঘোষ এফএ। বর্তমান প্রধান শিক্ষক ঝলক কান্তি চক্রবর্তী এমএসসি বিএড। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে মানবিক বিভাগে ৪৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এখানে কলেজ শাখা চালু হয়েছে। বর্তমানে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১ হাজার ৪শ’ ৭৮ জন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৮শ’ ২৪ জন। প্রাথমিক শাখায় রয়েছে দেড়শ’ শিক্ষার্থী। শিক্ষক সংখ্যা ২৩ জন। ২০১৪ সাল থেকে এখানে চালু রয়েছে এসএমসি পরীক্ষা কেন্দ্র।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে বিকশিত হওয়ার পর্যায়ে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে এখানে অনেক কীর্তিমান তৈরি হয়েছে। এদের মধ্যে ড. বীরেন্দ্র ভট্টাচার্য, অধ্যাপক পরিমল দেব, কবি ও গবেষক অধ্যাপক নৃপেন্দ্র লাল দাস, অধ্যাপক লোকেশ দেব, অধ্যাপক দ্বিপেন্দ্র চক্রবর্তী, প্রকৌশলী অচিন্ত্য দেব, ডা. নন্দলাল পাল, ডা. রঞ্জন রায়, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত শিল্পী প্রান্ত দেব, মিহির রঞ্জন দাস, বনানী সেনগুপ্ত, মীরা দাস, এ অঞ্চলের প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট মো. মাসউদ গাজী, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা লাকু দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা আসকির মিয়া, কুমুদ রঞ্জন দেব, মোয়াজ্জেম হোসেন ছমরু প্রমুখ।

এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত ঠিকই। কিন্তু একমাত্র ছাত্র বেতন ছাড়া অন্য সূত্র হতে দান অনুদান বা সরকারি মঞ্জুরির খাতটি দুর্বল। তাই অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না।



মন্তব্য চালু নেই