‘শোক নয়, হাসিনার নোংরা রাজনীতিই মুখ্য’

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে কোকোর মৃত্যু সংবাদে প্রধানমন্ত্রী গুলশান কার্যালয়ে এসে ফিরে যাওয়াতে নাকি অপমানবোধ করেছেন। আমরা সংবাদপত্র থেকে বিষয়টি জেনেছি। কিন্তু তার আসাটাকে বিএনপি ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছে। সে জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু মনে হচ্ছে শোক জানানোর চেয়ে শেখ হাসিনার নোংরা রাজনীতিটাই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। সেটাই হাসিল করা হচ্ছে অত্যন্ত জোরেশোরে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হুকুমের আসামী করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে রিজভী এ সব কথা বলেন। রিজভীর পক্ষে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফ জনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।

বিবৃতিতে রিজভী আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার আগুন এতো লেলিহান যে, তিনি সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান ও মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর সেক্টর কমান্ডার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর লাশ বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করতে দিলেন না। এমনকি কোকোর জানাজায় যাতে লোকসমাগম বেশী না হয় সেজন্য বিভিন্ন পাড়ামহল্লা, স্কুল, কুলেজ, মাদ্রাসাসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী হুমকি দিয়েছে। সুতরাং কোকোর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা জানাতে আসার উদ্দেশ্যই ছিল অপরাজনীতি ও কুটিল চাতুরি। সরকারের এ হেন ঘৃণ্য মানসিকতায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানান বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন গণবিরোধী সরকারের টিকে থাকার ভিত্তি হচ্ছে উৎপীড়ন আর নির্দয় জুলুম। অবৈধ ক্ষমতাসীনরা স্বেচ্ছা-অন্ধত্বের দিকে নিজেদেরকে ঠেলে নিয়ে গেছে। কারণ জনগণের কাছে জবাবদিহিতাকে তারা এখন ঘৃণা করে। সেইজন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে কব্জা করে নিজেদের সর্বনাশা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বেপরোয়া হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, সারাদেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার পরও তাদের জিঘাংসা প্রশমিত করতে পারছে না। গুম আর গুপ্তহত্যার হিড়িকে দেশজুড়ে কান্নার রোল উঠলেও সরকারের ক্রোধ যেন মিটছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে গুলি করার নির্দেশ দিয়ে তাদেরকে নানা ধরনের অনাচার ও অবাধ হত্যা বাণিজ্যে লিপ্ত করা হয়েছে। ফলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাই এখন র‌্যাব-পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি, ভাড়ায় সিরিজ হত্যা, গ্রেফতার বাণিজ্য, টাকা না পেয়ে ক্রসফায়ারের নামে খুন এবং পায়ে গুলি খেয়ে পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছে।

রিজভী আহমেদ বলেন, এখানেই শেষ নয়, নিপীড়ক সরকারের টার্গেট হচ্ছে এদেশের জনগণের অবিসংবাদিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর দলকে নিশ্চিহ্ন করা। কারণ জাতীয়তাবাদী শক্তি দুর্বল হলেই কেবলমাত্র দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়া সহজ হয়। সেই লক্ষ্যেই ভোটারবিহীন ক্ষমতাধররা একের পর এক সিরিজ মামলা দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জনগণকে তোয়াক্কা না করে, ভুয়া নির্বাচন করে, আন্তর্জাতিক মহলে তুমুল বিতর্কিত নির্বাচন হিসেবে স্বীকৃত সেই প্রহসনের নির্বাচনের পর তার প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা কী সম্মানজনক? দেশের তিনবারের আরেকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখে গোলমরিচের গুঁড়া স্প্রে করাটা কী শেখ হাসিনার জন্য সম্মানজনক ছিল? ইট, বালি, কাঠের ট্রাক আর বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে গুলশান কার্যালয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে কী মান রক্ষা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর?

রিজভী বলেন, যারা জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার কেড়ে নেয়, যারা ভয় দেখিয়ে আয়ত্বে নিয়ে গণমাধ্যমকে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়, গুন্ডামী, হুমকি আর রক্তপাতই যাদের ক্ষমতার ভিত্তি তারা যে মান সম্মানের ধার ধারেন না বা তোয়াক্কা করেন না তা সকলেই বিশ্বাস করে।

রিজভী বলেন, অবৈধ সরকার মনে করছে, শেষ অস্ত্র হিসেবে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দিলেই বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের ধারণা যে কত ভুল তা তারা টের পাচ্ছে না। বরং আন্দোলন আরও চরম তীব্রতায় ধেয়ে যাবে ভোটারবিহীন সরকারের মসনদের চুড়ান্ত পতন ঘটাতে।

রুহুল কবির রিজভী অবিলম্বে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামী করে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নেতাদের নামে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।



মন্তব্য চালু নেই