২০ দলের বিবৃতি :

শেষ রক্ষা হচ্ছে না বলে হত্যায় মেতেছে সরকার

‘শেষ রক্ষা হচ্ছে না দেখে’ সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে হত্যা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল।

তারা হুঁশিয়ার করেছে, “প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমতাসীনদের অবশ্যই দায়ী থাকতে হবে এবং জড়িত সবার বিরুদ্ধে আগামীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

বুধবার সন্ধ্যায় জোটের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে দাবি করা হয়, “জনগণের আন্দোলনে ক্ষমতা হারাবার ভয়ে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী রক্তের নেশায় উন্মাদ হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত কুৎসিত হুমকি, জুলুম-নির্যাতন, অধিকার হরণ, মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, অপহরণ-গুম-খুন, নাশকতা-অন্তর্ঘাত চালিয়েও ক্ষমতাসীনদের শেষ রক্ষা হচ্ছে না। তাই তারা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে হত্যা করছে।”

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনি, মতিঝিলে নড়াইলের পৌর কাউন্সিলর ইমরুল কায়েস ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রদল নেতা মতিউর রহমানকে গুলি করে হত্যার ঘটনা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

চলমান আন্দোলনে নিহতদের ‘বীর শহীদ’ আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের দাবি জানানো হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শৃঙ্খলা, পেশাদারি ও নিরপেক্ষভাবে কর্তব্য পালনের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “সুবিধাভোগী, দলবাজ ও পক্ষপাতদুষ্ট অল্প কিছু কর্মকর্তার অতি উৎসাহ ও বাড়াবাড়ির কারণে সেই সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে না।”

সব বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষভাবে আইনসম্মতভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, “তারা আমাদের প্রতিপক্ষ নন। আমরাও তাদের বিরুদ্ধে নই। আমরা আশা করি তারা এদেশের সন্তান হিসেবে জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রেখে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা ও অনুভূতির পক্ষে দাঁড়াবেন এবং কোনো অন্যায় ও বেআইনি আদেশ-নির্দেশ পালনে বিরত থাকবেন।”

একই সঙ্গে আটকাবস্থায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে ২০ দল।

২০ দলের অভিযোগ, “ক্ষমতাসীনদের শীর্ষপর্যায় থেকে শান্তিরক্ষার নামে দেখামাত্র গুলি, বিচার ছাড়াই হত্যা এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের আইন হাতে তুলে নেয়ার উসকানি দেয়া হচ্ছে। যৌথ অভিযানের নামে বিভিন্ন জনপদে বিরোধী দলের সমর্থকদের ওপর পাইকারি উৎপীড়ন, বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটতরাজ এবং পরিবারের সদস্যদের লাঞ্ছিত করার ঘৃণ্য ঘটনা ঘটছে।” বিবৃতিতে হুঁশিয়ার করা হয়, “এসব হানাদারি কার্যকলাপ অবিলম্বে বন্ধ না করলে এর জন্য পরিস্থিতির যদি আরো নৈরাজ্যকর অবনতি ঘটে তবে তার দায়ভার পুরোপুরি হুকুমদাতা ও পরিকল্পনাকারীদেরই বহন করতে হবে।”

চলমান আন্দোলন শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, “ভোটের হারানো অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার কায়েমের লক্ষ্যে জনগণের চলমান আন্দোলন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক। এ আন্দোলন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন। ”

বিএনপি জোটের পক্ষ থেকে সরকারকে সতর্ক করে বলা হয়, “রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের দেশী-বিদেশী আহ্বান উপেক্ষা করে দমন-পীড়নের পথে সমাধানের অপচেষ্টা এবং বিরোধী দলের শীর্ষ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত কুৎসা ও হুমকির পরিণাম শুভ হবে না। “

অবিলম্বে হানাহানি ও দমন-পীড়নের পথ ছেড়ে সমঝোতার লক্ষ্যে পরিস্থিতিকে দ্রুত স্বাভাবিক করতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।



মন্তব্য চালু নেই