‘শেখ হাসিনা দেশ বেচে না, রক্ষা করতে জানে’

ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার দেশ বেচে দিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এমন এক বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি দেশকে রক্ষা করতে জানেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ বেচে না, রক্ষা করতে জানে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে জানে, উন্নয়ন করতে জানে।’

ভারত সফর থেকে ফেরার পরদিন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। দেশ বেচার বিষয়ে তিনি এ সময় রসিকতাও করেন। বলেন, ‘ধামা ভরে নিয়ে গেছি, ফেরি করে বেচে দিয়েছি।’

চার দিনের সফরে গত শুক্রবার ভারত যান প্রধানমন্ত্রী। পরদিন দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ১১টি চুক্তি ও ২৪টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এই সফরের আগে থেকে সমালোচনামুখর বিএনপি বলছে, সরকার দেশকে ভারতের কাছে বেচে দিয়েছে।

গত রবিবার রাজধানীতে এক আলোচনায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকে দেশ বিক্রি করে দিয়েছে। সেজন্য পাঁচ বছরের জন্য এটা একটা চুক্তি করেছে- পাঁচ বছর তাকে থাকতে দিতে হবে। এই চুক্তি তো তিনি সেজন্য করলেন। ওই পাঁচ বছর পরে উনারা বোধ হয় কাগজে-কলমে দেশটাকে লিখে দিয়ে মনে হয় বিদায় নেবে আর কি।’

এই বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, এই কথাটা মনে রাখবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী কী বললো, তা জানি না। এই কনফারেন্সের পরেও শুরু করবে ঘ্যানর ঘ্যানর। করলে করুক, এগুলো আমি পাত্তা দেই না। আমি জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জীবনের মায়া করিনি, দেশের জন্য কাজ করি। কোথাও গেলে দেখার চেষ্টা করি মানুষের পায়ে স্যান্ডেল আছে কি না, পেটে ভাত আছে কি না। আমি দেখেছি কঙ্কালসার মানুষ। কোথাও গেলে আগে বলতো, ‘ভাত দে’। আজ বলে ‘বিদ্যুৎ দে’, ‘রাস্তা চাই’, ‘স্কুল চাই’। মানুষের চাওয়া পাল্টে গেছে।’

ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি সরকার প্রকাশ করবে কি না-একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের আত্মবিশ্বাসের এতটা অভাব কেন? সবই তো আজ উন্মুক্ত। দুই দেশের আলোচনার সবই পত্রিকায় চলে এসেছে। এখানে রাখঢাকের কিছু নেই। তারা কী বললো, তাতেই আপনারা সন্দিহান হয়ে যাবেন?’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলন, ‘আমি কিছু চাইতে যাইনি, বন্ধুত্ব চাইতে গিয়েছিলাম, পেয়েছি। এখানে চাওয়া-পাওয়া দেনা-পাওনার বিষয় না।’

অন্য এক প্রশ্রের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমস্যা আছে, সমস্যার সমাধানও আছে। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি করেছি। এবার ল্যান্ড বাউন্ডারি চুক্তির বাস্তবায়ন হয়েছে।’

ছিটমহল বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিব-ইন্দিরা ২৫ বছরের চুক্তিকে তারা (বিএনপি) বলেছে গোলামি চুক্তি, আরও কত কি। এই চুক্তি আমার আমলে শেষ হয়েছে, আমি বলেছি, এটা নিয়ে যখন এত কথা, তখন আর করবোই না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা (ভারতের সঙ্গে) স্থল সীমান্ত চুক্তি কেবল করেননি, পার্লামেন্টে আইনও পাস করে যান। কিন্তু ভারত তা করেনি। আমরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে কংগ্রেসকে অনুরোধ করলাম। ভারতের পার্লামেন্টে এটা রেটিফাই করতে হবে, সেটা তারা বুঝতে পারে। কংগ্রেস বিল উত্থাপন করে যায়। বিজেপি এসে তা পাস করে। সব দল একমত হয়ে বিলটা পাস করে। এই রকম ইউনিটি ভারতে ৭১ সালের আগে হয়নি। আপনাদের কী অনুভূতি হয়েছে জানি না, আমি যখন দেখছি বিলটা পাস হচ্ছে, আমার কাছে মনে হয় ৭১ এ ফিরে গেছি আমি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এসে ছিটমহল বিনিময়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেন? যারা দেশ বেচার, কথা বলে, তাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, ৭৫ এর পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা কেন ভারতের কাছে দাবিটা তুলেনি, বা সাহস পায়নি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর বহু দেশে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে ‍যুদ্ধ বেধে যায়। আমরা করেছি উৎসব করে। আপনারা এটা কোনাদিন উপলব্ধি করেছেন? যারা দেশ বাঁচাও দেশ বাঁচাও বলে মাইক নিয়ে বসে আছে, তারা করতে পারেনি কেন?’।



মন্তব্য চালু নেই