শেখ হাসিনা কেমন মা?

যে দেশের প্রধান ব্যক্তি সংসদে দাঁড়িয়ে হত্যাকারীর পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দেয়, সেই হত্যাকাণ্ডে তদন্তকারী সংস্থার আর কিছুই করার থাকে না বলে মন্তব্য করেছেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী।

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের লালনকারী কোন সরকার এ দেশে টিকতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।’

ত্বকী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত আজমেরী ওসমানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ত্বকী হত্যা কার নির্দেশে হয়েছিল তা জানা যাবে বলেও জানান তিনি।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা পরবর্তী নারায়ণগঞ্জের বাস্তবতা ও রাষ্ট্রীয় উদাসিনতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সদস্য সচিব হালিম আজাদ।

হালিম আজাদ অভিযোগ করে বলেন, ‘ত্বকী হত্যার ২ বছর পার হতে যাচ্ছে, অথচ এখনো এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র দেয়া হয়নি। মূল অপরাধীরা এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।’

তিনি বলেন, ‘ত্বকী হত্যা মামলার অভিযুক্ত সকলকেই অভিযোগপত্রের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ যেন বের হয়ে যেতে না পারে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।’

সব অপরাধীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তিনি।

এ সময় জাতীয় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ মৃত্যুর দেশে পরিণত হয়েছে। যেখানে অস্বাভাবিক মৃত্যু আজ স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের কাছে মানুষের নিরাপত্তা নেই, তাই সমাজকেই জাগ্রত করে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সেই কাজটিই করে যাচ্ছে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। কিন্তু যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে তাদেরকে ‘হয় রাজাকার নয়তো মালাউনের বাচ্চা’ বলা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের পরিচালকরা ভুঁয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফেকেট দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করছে।’

তিনি বলেন, ‘এসবের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা লিখলেও তাদের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সাংবাদিকরা দলীয় বিভাজনে বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ হলে সন্ত্রাসীদের মুখোশ উন্মোচন সম্ভব হবে।’

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে ত্বকী হত্যার বিচার করাও সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী বলেন, ‘শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজের পরিবার-পরিজন হারানোর ঘটনা বলে কান্নাকাটি করেন। অথচ ত্বকীর মতো একটি বাচ্চার মৃত্যুতে তার চোখ দিয়ে একবারও পানি বের হলো না। এমনকি হত্যার ২ বছর হতে চললেও তার কোন বিচার হলো না। তিনি কেমন মা?’

তিনি বলেন, ‘ত্বকী হত্যাকারীদের রক্ষা করতেই নামমাত্র তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। তাই আমরা প্রকৃত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতেও পারবো না। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা আছেন তারা অন্ধ ও বধির। অন্যের আহাজারি কখনো শুনবে না, শুধু নিজেদের স্বার্থের কথাই শুনবে। এমনকি নিজেদের স্বার্থে হেফাজত-জামায়াতের সঙ্গেও আঁতাত করে তারা।’

অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘সরকার সকল অপরাধের ঢাল হিসেবে যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে ব্যবহার করছে। এতে করে সরকার অপরাধী গডফাদারদের জায়গা করে দিচ্ছে এবং প্রকৃত রাজাকাররাও জায়গা করে নিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচার প্রক্রিয়া যথাযথভাবে চললে এতদিনে অনেকদূর এগিয়ে যেতো। পুলিশ-র‌্যাব জনগণের নিরাপত্তার পরিবর্তে সন্ত্রাসী, লুটেরা ও দখলদারদের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনই তার প্রমাণ। ত্বকী হত্যার আলামত পাওয়ার পরেও কেন বিচার হচ্ছে না, এর জবাব প্রধানমন্ত্রীকেই দিতে হবে এবং এর দায়ভারও তাকেই নিতে হবে।’

রফিউর রাব্বীর সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শফিকউদ্দিন আহমেদ।



মন্তব্য চালু নেই