শুরু হলো সিয়াম সাধনার রমজান
শুরু হলো পবিত্র রমজান। আজ রহমতের দশকেরও প্রথম দিন। ‘আহলান ওয়া সাহলান শাহরু রমাদান’ – সুস্বাগতম রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস।
আল কুরআন নাজিলের মহিমান্বিত ও বরকতপূর্ণ মাস রমজান। বছর ঘুরে আবার এসেছে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস রমজান। এ মাসে মুসলমানরা সারা দিন রোজা রাখেন। মন্দ কাজ এড়িয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত লাভের জন্য নামাজ-বন্দেগিতে সচেষ্ট থাকেন। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও এর ব্যতিক্রম নন।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের প্রশান্তি লাভ করবে মুসলমানরা। সারা বছর জ্ঞাত-অজ্ঞাতসারে তারা যে পাপ করেছে, তা থেকে ক্ষমা পাওয়ার মোক্ষম মাস হল এ রমজান। সিয়াম সাধনার দ্বারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুসলমানরা নাজাতের পথ খুঁজবে।
মুসলমানের জন্য রমজান হলো গভীর আত্মশুদ্ধি, সংযম ও খোদার সান্নিধ্য লাভের মাস। মাসটি পরিবার ও বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসের মানুষকে এক সঙ্গে আবদ্ধ করার নীতি উদযাপনের একটি সুযোগ। রমজান হলো মানুষের প্রতি শান্তি, ন্যায়বিচার, সমতা-সমবেদনার মাস। আমাদেরকে একে অপর থেকে যে বিভেদগুলো প্রায়ই দূরে সরিয়ে দেয়, রমজানের বন্ধন তার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘মাহে রমজান সংযম, আত্মশুদ্ধি ও ক্ষমা লাভের মাস। অশেষ রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের এ মাস মহান আল্লাহর নৈকট্য, শান্তি এবং তাকওয়া অর্জনের অপূর্ব সুযোগ এনে দেয়। রমজানের মহান শিক্ষা সমাজের সকল স্তরে ও সবার মাঝে প্রতিফলিত হোক।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে পবিত্র রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবতীয় ভোগবিলাস, হিংসা-দ্বেষ, উচ্ছৃঙ্খলতা ও সংঘাত পরিহার করে ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ সারা মুসলিম সমাজে এক অনাবিল আনন্দ। মুসলমানরা শামিল হয়েছে পবিত্র খতমে তারাবির জামাতে। আগামী ১৪ জুলাই মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সারা দেশে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর উদযাপিত হবে। হাজার রজনীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদর রমজান মাসকে করেছে বিশেষভাবে মহিমান্বিত। এ মাসে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কঠোর ত্যাগ, ধৈর্য, উদারতা ও সততা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন।
ভোগ-বিলাস ও যথেচ্ছাচার ত্যাগ করে সহজ, সুন্দর ও অনাড়ম্বর জীবনাচারে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় পবিত্র রমজানে। এ মাস মুসলমানদের জন্য আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও শারীরিক উন্নতির সুযোগ এনে দেয়। এমন এক মাসে দেশের সব মুসলমান ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ত্যাগ ও কৃচ্ছ্র সাধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির আদর্শকে সমুন্নত রাখতে অবশ্যই সচেষ্ট হবে।
যুগ যুগ ধরে এখানে যথাযোগ্য মর্যাদায় রমজান পালিত হয়ে আসছে। রোজা শেষে সবাই মিলে ইফতার করা ও আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের ইফতার পাঠানোর রেওয়াজও বহু পুরনো। ইফতারিতে নানা পদের ঝাল-মিষ্টি খাবার, শরবত ও ফলফলাদির সমাহার ঘটে। বিশেষ করে ছোলা ভাজা-পেঁয়াজু-মুড়ি মাখার কদর বেড়ে যায়। যা হোক, দিনের বেলা খাদ্য-পানীয় বর্জনের পাশাপাশি রোজাদারদের বাকসংযমীও হতে হবে। সংযমের মাসে যদি মানুষের জিহ্বা সংযত না থাকে, তবে সেটা রোজা পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে সবার সংযত আচরণ কাম্য।
মন্তব্য চালু নেই