স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বেঁধে দেয়া ২৮১ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সূচনাটা মোটেও ভাল হল না বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই কুলাসেকারার শিকার হয়ে সাঝঘরে ফিরেছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। তৃতীয় ওভারে কুলাসেকারার দ্বিতীয় আঘাতে ফিরে যান সাব্বিরও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশর ১১ রান। সৌম্য সরকার ৭ এবং সাকিব আল হাসান ০ রানে অপরাজিত আছেন।

এর আগে কুশল মেন্ডিস আর থিসারা পেরোর হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮০ রান সংগ্রহ করে লঙ্কান সিংহরা।

শনিবার (১ এপ্রিল) কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে (এসএসসি) তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়িক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কাকে দারুন সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার দানুশকা গুনাতিলকা ও উপল থারাঙ্গা। একের পর এক মাশরাফি, মোস্তাফিজদের বল সিমানা ছাড়া করে দ্রুত রান তুলতে থাকেন দুই ওপেনার।

একাদশতম ওভারে এসে গুনাতিলকা-থারাঙ্গার ৭৬ রানের জুটিকে বিচ্ছিন্ন করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার বলে মাহমুদউল্লাহর তালুবন্দি হয়ে ফেরার আগে ৩৮ বলে তিনটি চার আর এ ছক্কায় ৩৪ রান করেন গুনাথিলকা। অবশ্য মাশরাফির সৌজন্যে একবার জীবন পেয়েছিলেন তিনি। এরপর আরেক ওপেনার ইপল থারাঙ্গাকে বেশি দুর এগুতে দেননি তাসকিন। দলীয় ৮৭ রানে এই ওপেনারকে সরাসরি বোল্ড করেন আগের ম্যাচের এই হ্যাটট্রিকম্যান। লেগ স্টাম্পের ওপর তাসকিনের ফুল লেংথের বলটি খেলতে গিয়ে গতিতেই পরাভূত হন থারাঙ্গা।

দুই ওপেনারের বিদায়ে খানিকটা চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। তবে দীনেশ চন্দিমাল আর কুশল মেন্ডিস প্রতিরোধ গড়ে লঙ্কান দলের হাল ধরেন। তাদের ৪৯ রানের এই জুটি বিচ্ছিন্ন হয় চন্দিমালের রানআউটে। এরপর দলীয় ১৬১ রানে সিরিবর্ধনেও রানআউট হয়ে সাঝঘরে ফেরেন। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে দুর্দান্ত ব্যাট করে যাচ্ছিলেন মেন্ডিস। সতর্কতার সাথে খেলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৯ম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি। এরপর আর তাকে বেশি দুর এগুতে দেননি মোস্তাফিজ। তার বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেয়ার আগে ৭৬ বলে চারটি চারের মারে ৫৪ রান করেন আগের ম্যাচের এই সেঞ্চুরিয়ান।

দলীয় ২১৬ রানে শ্রীলঙ্কার ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন হয়। অধিনায়ক মাশরাফির করা ওই ওভারের তৃতীয় বলে মাহমুদুল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে সাঝঘরে ফেরেন আসেলা গুণারত্নে। তিনি করেন ৩৪ রান। পরের ওভারেই দ্বিতীয়বারের মত আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। এবার তার অফ কাটারে কাটা পড়েন লঙ্কান ব্যাটসম্যান সেক্কুগে প্রসন্ন। দলীয় ২৭৫ রানে মাশরাফির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন দিলরুয়ান পেরেরা।

৮ উইকেট হারানো লঙ্কানদের স্কোর বড় করার দায়িত্ব নেন থিসারা পেরেরা। ঝড়ো গতিতে ব্যাট চালিয়ে ক্যারিয়ারের ৭ম ওয়ানেডে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। মাশরাফির তৃতীয় শিকার হওয়ার আগে ৪০ বলে চারটি চার আর এক ছক্কায় ৫২ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮০ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয় স্বাগতিকরা। ফলে সিরিজ জিততে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮১ রানের।

টাইগার বোলারদের মধ্যে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান ২টি উইকেট শিকার করেছেন।

এদিন বাংলাদেশ দল অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই নেমেছে। বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন না হলেও শ্রীলঙ্কা একটি পরিবর্তন হয়েছে। নুয়ান প্রদীপের জায়গায় এসেছেন প্রসন্ন।

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৯০ রানের বড় ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। তবে বৃষ্টির কারণে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচটি পরিত্যাক্ত হয়েছে। ফলে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে টাইগাররা। আজকের ম্যাচটি জিতলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেবে মাশরাফিরা।

এদিকে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজও কলম্বোতেও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে এই মুহুর্তে কলম্বোর আকাশে রোদ ঝলমল করছে। মেঘের আনাগোনাও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।

শ্রীলঙ্কা একাদশ: উপুল থারাঙ্গা (অধিনায়ক), দানুশকা গুনাথিলা, কুশল মেন্ডিস, দিনেশ চান্ডিমাল, আসেলা গুনারত্নে, মিলিন্দা সিরিবর্ধনে, থিসারা পেরেরা, দিলরুয়ান পেরেরা, সুরঙ্গা লাকমল, নুয়ান কুলাসেকেরা ও সেক্কুগে প্রসন্ন।