শুধু ফিটনেস ব্যান্ড পরলেই আপনার ওজন কমবে না
শুধুই ফিটনেস ব্যান্ডের ওপর ভরসা রেখে ভাববেন না, আপনি খুব তাড়াতাড়ি হান্ড্রেড পার্সেন্ট ফিট হয়ে যাবেন। ভাববেন না, যেমন খুশি খাবেন আর ব্যয়াম-ট্যয়াম করে খুব বেশি ঘাম ঝরিয়েও তেমন লাভ নেই, শুধু ফিটনেস ব্যান্ড পরলেই আপনি হুট করে ফিট হয়ে যাবেন।
হবে না। আপনাকে ব্যয়াম-ট্যয়াম করতে হবে। খুব মেপেজুপে খেতে হবে। ক্যালরি আর পরিমাণ মেপে। নিয়মিত ভাবে। খুব যদি নিয়ম করে সকালে দৌড়নো বা ব্যয়াম-ট্যয়াম করতে না-ও পারেন, নানা কাজে সারা দিন ধরে বিস্তর দৌড়-ঝাঁপ করুন। খেয়ে-দেয়ে বাড়ি থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে বাস ধরার আগে রিক্সা বা অটোয় চেপে বড় রাস্তায় না পৌঁছে হেঁটে যান। যাতে খুব ঘাম ঝরে। প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম হয়। সেই পরিশ্রমই আপনার হজমশক্তি বাড়াবে। আর ঠিক মতো খাবার হজম হলেই পরের দিন সকালে মলত্যাগে অসুবিধা হবে না। শরীর যে ফিট আছে, তা এ সবেই মালুম হবে।
পিট্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এডুকেশন্স ডিপার্টমেন্ট অফ হেল্থ অ্যান্ড ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটির দু’বছর ধরে চালানো একটি গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম-‘‘এফেক্ট অফ ওয়্যারেব্ল টেকনোলজি কম্বাইন্ড উইথ আ লাইফস্টাইল ইন্টারভেনশন অন লং-টার্ম ওয়েট লস: দ্য আইডিয়া র্যান্ডমাইজ্ড ক্লিনিকাল ট্রায়াল’’। গবেষণাপত্রটি বুধবার প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘দ্য জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এ।
বাজারে যে সব ফিটনেস ব্যান্ড পাওয়া যায় আকছার, সেই সব ফিটনেস ব্যান্ড সত্যি-সত্যিই দ্রুত আমাদের শরীরের ওজন কমানোর ব্যাপারে কতটা কার্যকরী হয় বা সেই সব ফিটনেস ব্যান্ড শরীরের ওজন-হ্রাসকে সত্যি-সত্যিই দীর্ঘ মেয়াদি করতে পারে কি না, সেটা খতিয়ে দেখার জন্যই ২৪ মাস ধরে চালানো হয়েছিল ওই সমীক্ষা।
গবেষকরা দেখেছেন, একই সঙ্গে যাঁরা ফিটনেস ব্যান্ড পরেন ও নিয়মিত ব্যয়াম, দৌড়ঝাঁপ করেন, তাঁদের চেয়ে অনেক দ্রুত ও অনেক বেশি কার্যকর ভাবে শরীরের ওজন কমাতে পারেন তাঁরাই, যাঁরা ওজন কমাতে শুধুই ব্যয়াম করেন, দৌড়ঝাঁপ করেন আর ক্যালোরি মেপে খাওয়াদাওয়া করেন। ফিটনেস ব্যান্ড তাঁরা কিন্তু একেবারেই পরেন না। মানে, তাঁরা শরীরের ওজন কমানোর জন্য শুধুই ‘বিহেভিয়্যারাল ওয়েট লস প্রোগ্রাম’-এর মধ্যে দিয়ে যান। আরও সঠিক ভাবে বলতে হলে, গবেষকরা দেখেছেন, যাঁরা কোনও ফিটনেস ব্যান্ড না পরে ওজন কমানোর জন্য শুধুই নিয়মিত শারীরিক কসরৎ, দৌড়ঝাঁপ আর ব্যয়াম, যোগাসন, প্রাণায়াম করেন, ক্যালোরি মেপে খাওয়াদাওয়া করেন, ২৪ মাসে তাঁরা দ্বিগুণ ওজন কমাতে পেরেছেন। প্রায় ১৩ পাউন্ড। আর যাঁরা শুধুই ফিটনেস ব্যান্ড পরে শরীরের ওজন কমাতে চেষ্টা করেছিলেন, দু’বছরে তাঁদের ওজন কমেছে ঠিক ৭.৭ পাউন্ড।
কেন শরীরের ওজন কমানোর ব্যাপারে ফিটনেস ব্যান্ডের চেয়ে ব্যয়াম, দৌড়ঝাঁপ আর শারীরিক কসরৎই বেশি কার্যকরী হয়? ওই সমীক্ষাই জানিয়েছে, ফিটনেস ব্যান্ডের ব্যবহার আমাদের শরীরের ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটাকে কম মেহনতের করে তোলে এটা যেমন ঠিক, তেমনই ওজন কমানোর জন্য মেপেজুপে খাওয়াদাওয়া, ব্যয়াম, দৌড়ঝাঁপের মতো যে সব সুনির্দিষ্ট যাপন-পদ্ধতি রয়েছে, ওই ব্যান্ড সেগুলির প্রতি ব্যবহারকারীদের আগ্রহ বাড়ায় না বা তা বাড়াতে সাহায্য করে না। অথচ, শরীরের ওজন কমানোর জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরই হল, মেপেজুপে খাওয়াদাওয়া, নিয়মিত ব্যয়াম, যোগাসন, দৌড়ঝাঁপ আর শারীরিক পরিশ্রম।
ওই গবেষণার ক্ষেত্র-সমীক্ষাটি চালানো হয়েছিল কী ভাবে?
গবেষকরা জানিয়েছেন, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের ৪৭০ জনের ওপর চালানো হয়েছিল ওই সমীক্ষা। ২৪ মাস ধরে। যাঁদের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছিল, তাঁদের ৭৭ শতাংশই মহিলা। আর ২৯ শতাংশ অর্থনৈতিক ভাবে তুলনায় পিছিয়ে থাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। সমীক্ষার শুরুতে ৪৭০ জনেরই ‘বডি মাস ইনডেক্স’ (বিএমআই) ছিল মোটামুটি একই রকমের। ২৫ থেকে ৩৯-এর মধ্যে। ৬ মাস অন্তর তাঁদের ওজন মাপা হয়েছিল।
মন্তব্য চালু নেই