‘শুধু পুলিশ নয়, রাজনীতিকরাও ঘুষ খায়’

এম.এ আয়াত উল্যা, নোয়াখালী থেকে : আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মাদক ও জঙ্গিবাদ দুটাই অভিন্ন দুই শত্রু। জঙ্গীবাদ ও মাদকের ভয়াবহতা আজ জাতীয় সমৃদ্ধিতে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়ে। তারুণ্যকে ধংস করছে মাদক, তারুণ্যকে বিপদগামী করছে জঙ্গিবাদ। আজ ইয়াবা নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতকে ধংস করে দিচ্ছে। এভাবে তারুণ্য তথা জেনারেশন ধংস হতে থাকলে দেশের উন্নয়নে একটি বড় শূন্যতা তৈরি হবে। দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি বজায় রাখতে জঙ্গীবাদ ও মাদককে রুখতে হবে। এ জন্য পুলিশকে জনপ্রতিনিধি ও সর্বস্তরের মানুষ সতস্ফুর্ত ও আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা করতে হবে। পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মধ্যেকার দুরত্ব কমিয়ে আনতে দেশ জুড়ে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের টাকায় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে। দেশ জুড়ে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা সুন্দর সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণে পুলিশের সঙ্গে জনতার ব্রিজ নির্মাণে কাজ করবে। জনস্বার্থে, দেশের স্বার্থে পুলিশ ও জনগণের যে সেতু নির্মাণ হবে, তা বিশ্বাসের, আস্থার, ভালোবাসার ও ন্যায় বিচারের। শনিবার দুপুরে শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে নোয়াখালী জেলা পুলিশ কর্তৃক আয়োজিত কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ খাওয়ার অভিযোগের কথা উল্লেখ করে মন্ত্র্রী আরো বলেন, গুটি কয়েক অসৎ পুলিশ সদস্যের ঘুষ, দুর্নীতি ও অন্যায়ের দায়ভার পুরো বাহিনী নিতে পারে না। তিনি সম্প্রতি কয়েকটি জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের সাহসী অভিযান ও মাদক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। শুধু পুলিশ ঘুষ খায় তা নয়, রাজনীতিকরাও ঘুষ খায়। টাকার বিনিময়ে চাকরির জন্য সুপারিশ, তদবির সবই করে রাজনীতিকরা। নির্বাচন এলে রাজনীতির অঙ্গন টাকায় বেচা-কেনা হয়। রাজনীতিকদেরও সৎ হতে হবে। সততা ও নিষ্ঠার সাথে রাজনীতি করার কারণে দেশের ঐতিহ্যাবহী দল আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। তাই দলীয় সাংসদসহ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মনে রাখবেন সততাই শক্তি, সততাই মুক্তি। ত্যাগীদের মূল্যায়ন হবেই। দেশের দুই অভিন্ন শত্রু জঙ্গীবাদ ও মাদক নির্মূলে জনপ্রনিধিদের স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকার পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান। জঙ্গীবাদ ও মাদক কারো বন্ধু হতে পারে না। রাজনীতি নয় দেশকে বাঁচাতে হবে। তাই দল-মত নির্বিশেষে সকল রাজনীতিকদের এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানান মন্ত্রী। সমাবেশে প্রধান আলোচক ছিলেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম। নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ পিপিএম-সেবার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, নোয়াখালী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. এবিএম জাফর উল্যা, জেলার সাংসদবৃন্দ, জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস প্রমুখ। মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক তার বক্তব্যে বলেন, পুলিশকে আরো গণমুখি, সেবামুখি, জবাবদীহি করার উদ্দেশ্যে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার জন্ম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুলিশের পাশাপাশি কউিনিটি পুলিশ দারুন ভূমিকা রাখছেন। দেশের মালিক জনগণ, পুলিশ জনগনের সেবক। কিন্তু দেখা যায় জনগণ ও পুলিশের মধ্যে বড় দূরত্ব রয়েছে। জনতা ও পুলিশের দুরত্ব কমিয়ে আনতে প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায় কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি পুলিশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনি বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা জোরদার হলে জনশ্রুত পুলিশি হয়রানি কমে যাবে। থানায় থানায় যেসব দালাল আছে তাও দুর হয়ে যাবে। সামাজিক অপরাধ, পারিবারিক কোন্দলের কারণে হয়রানিমূলক মামলা, মাদকের ভয়াবহতা সবই কমে যাবে। কারণ কমিউনিটি পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা হবে স্থানীয়। কমিউনিটি পুলিশকে যারা নিয়ন্ত্রণ করবে, তারা হবে সৎ, নিষ্ঠাবান তথা জনমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। পাশাপাশি থানার ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের সহযোগিতা করবে। তিনি সর্বস্তরের মানুষকে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের সামনে থেকে প্রায় ১৩ হাজার কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের করা হয়। বিকালে মন্ত্রী এবং আইজিপি কোম্পানীগঞ্জ থানার নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন। সন্ধ্যায় আইজিপির উপস্থিতিতে জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই