শিশু শ্রমিক আলী আকবর পিএসসি পরীক্ষার্থী

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর সিরতা ইউনিয়নের চর খরিচা গ্রামে জন্ম আলী আকবরের। ১১ সদস্য বিশিস্ট পরিবারের ভরণ পোষণ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ায় তার রিক্সাচালক বাবা তাকে মাত্র ৬ চছর বয়সেই কাজে পাঠিয়ে দেয়। তখন সে কেবল প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে স্কুলে যাওয়া আসা শুরু করেছে। তার বড় ভাই বোনদেরও বেশিদূর পড়াতে পারেনি। কেউ স্থানীয় বাজারে চায়ের দোকানে, কেউ এলাকায় ভ্যান চালিয়ে আর বোনদের কেউ অন্যের বাসায় কাজ করে কোনমতে বিরাট এই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে।আলী আকবর

আলী আকবর ঢাকায় এক বাসায় কাজ শুরু করে ১০০ টাকা মাসিক বেতনে। ঢাকার বাসার ঠিকানা সে বলতে পারেনা। কাজের বিনিময়ে ১০০ টাকা ছাড়াও খাওয়া, কাপড় চোপড় থাকার সুযোগ পায়। বাসায় তার বয়সী একটি শিশুর দেখাশুনা ছাড়াও ঘর পরিস্কার, বাজার যাওয়া, ছাদে কাপড় শোকানো ও বড়দের টুকটাক ফরমায়েস ইত্যাদি দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে। তবে দায়িত্ব পালনে নূন্যতম ত্রুটি হলেই মারধর ও বকাঝকা ছিল তার উপহার। এসমস্ত উপহার দিনের পর দিন সহ্য করা তার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়লে এ বাসা থেকে ৩ বছর পর চলে আসে এবং অন্যত্র কাজের সন্ধানে থাকে।

আলী আকবরের পরবর্তী ঠিকানা হয় যশোরে। সেখানেও প্রায় একই ধরণের কাজ করে সময় কাটতো। কিছুদিন কাজ করার পরে এখানে একদিন কাজের সামান্য ত্রুটি ধরে মালীক তাকে মারধর করে বাথরুমে আটকে রাখে। মালীকের সন্তানদের পড়াশুনা করতে দেখলে আলী আকবরের পড়তে ইচ্ছে করে কিন্তু সেই সুযোগ নেই। সীমাহীন অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ৩ বছর পরে বেড়ানোর কথা বলে বাড়ি চলে আসে আলী আকবর। আর যাওয়া হয়নি বাইরে কোন কাজে।

চর খরিচা গ্রামের সমাজ কর্মী আমিনুল হক মিলন, সমাজ সেবক ডাঃ মাসুদ, ডাঃ মোহাম্মদ আলী, এসএমসি সভাপতি দুলাল মিয়ার সহযোগিতায় ২ বছর পূর্বে আলী আকবর সাফ স্কুল নামে একটি স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। তার স্কুলে ভর্তি হওয়ার পেছনে খরিচা শিশু ক্লাবের অবদানও রয়েছে। উল্লেখ্য সেভ দ্য চিলড্রেন এর আর্থিক সহায়তায় সাফ এনজিও এই সাফ স্কুলটি পরিচালনা করে। বর্তমানে আলী আকবর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, পাশাপাশি এলাকায় ভ্যান চালিয়ে সংসারে সহযোগিতা করছে। সমাজ কর্মী আমিনুল হক মিলন ও ডাঃ মাসুদ জানান, ইউনিয়ন পরিষদ হতে আলী আকবরের মায়ের জন্য একটি ভিজিডি কার্ডের ব্যবস্থা করার জন্য তারা ইতিমধ্যেই কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আলী আকবর সকলের সহযোগিতা কামনা করেছে।



মন্তব্য চালু নেই