শিশুর প্রশংসা করুন বুঝেশুনে

মানুষের প্রতিভার প্রশংসা করাটা অনেক সময় ভালোর চেয়ে খারাপই হয়ে থাকে। বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করাটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর ধরণের উপর নির্ভর করে তা ওই ব্যক্তির উপর ভালো প্রভাব ফেলবে নাকি খারাপ প্রভাব ফেলবে। শিশুর উপরে এর অনেক বেশি প্রভাব পড়তে দেখা যায়। প্রশংসার খারাপ দিক এবং সঠিকভাবে প্রশংসা করার উপায় সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।

আপনার শিশু বুদ্ধিমান এই কথাটি তাকে কেন বলা উচিৎ নয়?

আপনার শিশু সন্তান প্রাকৃতিক ভাবেই বুদ্ধিমান তা বলার মাধ্যমে তাকে উৎসাহিত করতে পারবেন এমনটাই ভাবা হয়। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে শিশুকে এভাবে না বলাই ভালো। মনোবিজ্ঞানী ডা. ক্যারল ডিউইক চাইল্ড মোটিভেশন নিয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর কাজ করেছেন। প্রশংসা শিশুর উপর কেমন খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন তিনি। যখন শিশুর কোন বৈশিষ্ট্যের প্রশংসা করা হয় তখন সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়। যে কাজটিতে সে ভালো শুধু সেটিই করার চেষ্টা করে। তখন তারা পরাজিত হতে ভয় পায়। শিশু কোন কিছু শিখার পরিবর্তে এটাই ভাবতে থাকে যে বুদ্ধিমত্তা বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য। তারা কিভাবে শিখতে হয় তার প্রতি মনযোগী হওয়ার পরিবর্তে তাদের বুদ্ধিমান প্রমাণ করার জন্যই কাজ খোঁজে। তার এই ধরণের মানসিকতার জন্য সে চ্যালেঞ্জ আছে এমন কোন করতে গিয়ে অকৃতকার্য হবে। এভাবেই শিশুর শিক্ষার ক্ষেত্রে বিপর্যয় আনতে পারে প্রশংসা।

কীভাবে শিশুকে পুরস্কৃত করা যায়?

সব প্রশংসাই খারাপ নয়। ভুলভাবে করা হলে তা শিশুর জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠে বিশেষ করে শিশুর প্রেরণার ক্ষেত্রে। শিশুকে প্রশংসা করার কার্যকরী উপায় আছে। মূল বিষয়টি হচ্ছে শিশু কোন একটি কাজ করার ফলে যে ফলাফল আসলো তার জন্য নয় বরং কাজটি করার জন্য সে কি প্রকারের প্রচেষ্টা করেছে তার প্রশংসা করা। তাই শিশুকে প্রেরণা দেয়ার ক্ষেত্রে নৈতিক কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা উচিৎ। এর ফলে কোন কাজ করতে গেলে অনেক ভুল হলেও সে ভয় পাবেনা, বরং সফল হওয়ার সঠিক পথটিই সে খুঁজে পাবে। কোন কাজ করার সামর্থ্য তার আছে বা নাই এটা না বলে কাজটির প্রতি মনোযোগী করে তোলার মত প্রশংসা করা উচিৎ যাতে কাজটি শেখার প্রক্রিয়ার সাথে সে যুক্ত হতে পারে। ক্যারল ডিউইক তার গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই বলেছেন।

ডা. ক্যারল ডিউইক প্রশংসার বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে “মাইন্ডসেট” নামে একটি বই লিখেছেন। তার গবেষণার জন্য তিনি পঞ্চম শ্রেনীর কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে দুটি দলে বিভক্ত করেন এবং একটি পরীক্ষা নেন। পরীক্ষার পরে একটি দলকে তিনি বলে “তোমরা অবশ্যই বুদ্ধিমান” অন্য দলটিকে তিনি বলেন “তোমাদের আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে”। ২য় পরীক্ষা নেয়ার কথা যখন স্টুডেন্টদেরকে বলা হয় এবং এই পরীক্ষাটি একটু কঠিন হবে বলা হয় তখন প্রথম দলটির ৯০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীই পরীক্ষাটিতে অংশগ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু কেন? কারণ তারা ভয় পায় তাদের স্বীকৃতিটা ভুল প্রমাণিত হতে পারে বলে। দ্বিতীয় দলটির বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষাটি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং যখন এই টেস্টে তারা ভালো করতে পারেনা তখন ডিউইক এর গবেষকেরা ছাত্র-ছাত্রীদের এটা বলতে শুনেন যে, “এটা আমার প্রিয় টেস্ট”, কারণ তারা চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসে। সবশেষে তৃতীয় টেস্টটির পালা আসে যা ছিলো আগেরটির চেয়ে কঠিন। ফলাফল আসে- যে দলটিকে স্মার্ট বলা হয়েছিলো তারা খারাপ করে, আর অন্য দলটি এদের চেয়ে ৩০% ভালো করে। উপসংহারে ডিউইক এটাই বলেন যে, শিশুদের এমন কিছুই বলা উচিৎ যা তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে বলার মাধ্যমে তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয় যা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।



মন্তব্য চালু নেই