শিশুর পুষ্টিকর খাবার

সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে, হাজারো স্বপ্নের আশা জাগিয়ে এই পৃথিবীতে জন্ম নেয় ছোট্ট শিশু। এই নতুন অতিথিকে নিয়ে তাই সকলের মধ্যে আগ্রহের শেষ থাকেনা। আদর-ভালবাসার থাকেনা কোন কমতি। যদিও এই সময় মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্যকিছু খাওয়ানো যায়না, তারপরও কেউ মধু, কেউ মিষ্টি কেউবা পায়েশ মুখে দিয়ে দেয় ভালবাসার ছলে। এরপর দিন গোনা কবে ছয় মাস পার হবে আর শিশুর মুখেভাত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় শিশুর বাড়তি খাবার গ্রহন করার পালা। আজকাল সব মায়েদেরই অভিযোগ যে, শিশু কিছু খেতে চায়না। অথবা চকোলেট বা পছন্দের খাবার ছাড়া কিছুই খায়না। সত্যিই এই অভিযোগ অমূলক নয়। লক্ষ্য করলেই দেখা যায় শিশুদের খাদ্যের তালিকায় স্থান পায় চকোলেট, চিপস্‌, জুস কিংবা মুখরোচক কোন খাবার। মায়েরা মনে করেন বুকের দুধের পাশাপাশি একটু বাড়তি কিছু দিলেই পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। অনেক শিশুই অপুষ্টিতে বড় হতে থাকলেও মা-বাবা এক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব দেন না। তারা মনে করেন বড় হলেই স্বাস্থ্য ঠিক হয়ে যাবে। আবার অনেক শিশুর স্বাস্থ্য ভাল থাকায় অবিভাবকরা নিশ্চিন্ত থাকেন। আমাদের গতানুগতিগ এই চিন্তাধারাই শিশুর সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ ব্যহত করার জন্য যথেষ্ট। শিশুর বৃদ্ধির সময় শারীরিক দিকটা গুরুত্ব দেয়া হলেও মানসিক বিকাশ কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব, কিন্তু ব্রেই ডেভেলপমেন্ট ব্যহত হলে তা আর ফিরেয়ে আনা সম্ভব নয়। ডাক্তারদের মতে শিশুর প্রায় ৭০ ভাগ ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট হয় ৩ বছর বয়সের মধ্যেই। তাই এ সময়ে শিশু যদি সঠিক পুষ্টি না পায় তার মানসিক বিকাশ ব্যহত হয়ে সারা জীবনের জন্য বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুর খাবার কেমন হবে অধ্যাপক ডা. এম আর খানের মতে খাবার দামী হলেই যে তা সব সময় ভাল খাবার হবে, এর কোন মানে নেই। কম দামের খাবার থেকেও দেহের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাপাদান পাওয়া যেতে পারে। মাছ, মাংস ও ডিমের দাম বেশী; এ সমস্ত আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাব আমরা কম দামের খাদ্য, যেমন ডাল, সিম, ছোলা ইত্যাদি দিয়ে পূরণ করতে পারি। হয়তো অনেকেই জানেন না যে, ডালে প্রচুর আমিষ থাকে, ডাল থেকে ভিটামিন এবং খণিজ লবণও পাওয়া যায়। ভাত-ডাল-তেল-সবজি (কলা-পেঁপে-লাউ) এবং সম্ভব হলে মাংস, কলিজা বা ডিম মিলিয়ে যে খিচুড়ি তৈরী করা হয়, তা খুবই মুখরোচক এবং পুষ্টিকর। এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি খাদ্যাপাদানই বর্তমান থাকে। চালের চেয়ে গম কম পুষ্টিকর নয়। গমের দামও কম। দুই-এক বেলা আটার রুটি বা আলুর চপ খেয়েও আমরা চালের চাহিদা কমাতে পারি। সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ আছে। গ্রামে প্রায় প্রত্যেকের বাড়ীতেই রান্নাঘরের পাশে ছোট্ট এক চিলতে জায়গা থাকে। এতে সহজেই মৌসুমী ফল-মূল ও শাক-সবজি ফলানো যায়। তাহলে, শাক-সবজি বাজার থেকে কম কিনতে হয়। অনেকেই মনে করেন: ফল দামী হলেই বুঝি এর খাদ্যমান বেশী হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আপেল ও কমলালেবুর দাম পেয়ারা বা আমলকির চাইতে অনেক বেশী; কিন্তু পেয়ারা বা আমলকিতে যে পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে, তা কমলালেবু ও আপেলের চাইতে অনেকগুণ বেশী। উপরোন্ত,পেয়ারাতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। আঙ্গুরের খাদ্যমান অত্যন্ত নিম্নমানের। একটু সমাঞ্জস্য রেখে শিশুর প্রত্যহিক খাবার ঠিক করুন, আপনার সোনামনিকে দিন সঠিক বিকাশ।



মন্তব্য চালু নেই