শিল্পে দক্ষ কর্মী তৈরির তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

কারখানায় কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, শ্রম অধিকার নিশ্চিতকরণ, পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত, অধিক সংখ্যক নারী ও প্রতিবন্ধী নিয়োগসহ শ্রমিকদের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা জোরদার শিল্পপতিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পাশাপাশি শিল্প মালিকদের শুধু ব্যবসা করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে দক্ষ কর্মী তৈরিতে তাদের প্রশিক্ষণের দিকেও বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

রোববার ঢাকায় দক্ষতা, নিয়োগযোগ্যতা এবং শোভন কাজ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শিল্পোদ্যোক্তাসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব ব্যতিত শুধু সরকারি উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিয়ে আসতে পারবে না।”

ওসমানী মিলনায়তনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন এবং ন্যাশনাল কো-অডিনেশনকমিটি ফর ওয়ার্কাস এডুকেশন এ সম্মেলনের আয়োজক।

প্রধানমন্ত্রীর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, বিজিএমই সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশে কানাডার রাষ্ট্রদূত বেনিয়েত পিয়েরে লারামি, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ফস, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ এমপ্লয়ার্সের মহাসচিব লিন্ডা ক্রমইংয়, বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট প্রাকটিসের কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা পরিচালক অমিত দার, ন্যাশনাল কো-অডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কাস এডুকেশনের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর।

স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি সালাউদ্দিন কাশেম খান।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি এবংকর্মসংস্থানের জন্য পণ্যের বৈচিত্র এবং বাজার সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তায় গুরুত্ব দিয়ে সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “তবে শুধু প্রণোদনাই যথেষ্ট নয়, আমাদের মূলধন প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে হবে।

“আমাদের আরও বেশি করে চিন্তা করতে হবে, আরও উন্নত মানের পণ্য কী ভাবে বাজারজাত করতে পারি। আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলিকে উন্নততর উৎপাদনশীলতার উপর ভিত্তি করে পুনবির্ন্যাস করতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের শিখতে হবে কী করে বর্তমান পণ্যসামগ্রীতে মূল্য সংযোজন করা যায়। যাতে তৈরি পোশাকসহ সর্বক্ষেত্রেই আমরা ভালো মজুরি পেতে পারি এবং মান উন্নত করতে পারি। আর সেই সাথে মূল্যটাও যেনো বৃদ্ধি হয়।”

জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এবং শ্রমচাহিদার রূপান্তর জাতীয় অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে উল্লেখ শেখ হাসিনা বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনশক্তির কর্মোপযোগী দক্ষতা বৃদ্ধি অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে।

“আমি আশা করি, উন্নয়ন সহযোগীগণ অতীতের মত ভবিষ্যতেও দক্ষতা উন্নয়ন, নিয়োগযোগ্যতাবৃদ্ধি ও শোভন কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন”

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিল্পের প্রয়োজনে দক্ষ ব্যবস্থাপক তৈরির লক্ষ্যে যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণব্যবস্থা চালু করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “দক্ষ শ্রমশক্তির পাশাপাশি দক্ষ ব্যবস্থাপক ও দক্ষ পেশাজীবী তৈরির মাধ্যমে এক্ষেত্রে বিরাজমান পরনির্ভরশীলতা দূর করে জাতীয় সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ইন্সটিটিউটগুলো.. সেখানে শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে শিল্পের চাহিদার সমন্বয় ঘটাতে হবে।”

দেশীয় শিল্পের মালিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শিল্পের মালিকদের কাছে আমার একটিআবেদন থাকবে- যার যার নিজের শিল্প ও কলকারখানা.. তাদের চাহিদা মাফিক যে যোগ্য কর্মী প্রয়োজন, তাদের ট্রেনিংয়ের দিকে একটু বিশেষ ভাবে দৃষ্টি দেবেন।”

দক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা শিল্পের মালিক হবেন,তাদেরকেও একটু টাকা পয়সা খরচ করতে হবে, তাদেরকেও এ ব্যাপারে একটু নজর দিতে হবে। একটা কারখানা করলাম আর পয়সা কামাই করলাম- এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেখানে আরও একটু বেশী উদ্যোগী হতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা আমরা দিচ্ছি।”

নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র চিহ্নিত করে দক্ষতা প্রশিক্ষণের পরিধি বিস্তার, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিস্তারে নতুন নতুন অবকাঠামো সৃষ্টি, বর্তমান প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ও নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন।

“অর্থের যোগান সহজ করার লক্ষ্যে সরকার জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছে,” বলেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের মতো সীমিত সম্পদের অতি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কৃষিই এক সময় অর্থনীতির মূলচালিকাশক্তি ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ধীরে হলেও আমাদের অর্থনীতি শিল্প এবং সেবাখাতের দিকে অগ্রসর হয়েছে।”

দক্ষতা উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি এবং এনজিও পরিচালিত কারিগরি, বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডকে সুসমন্বিত করে শ্রম বাজারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি ২০১১’ প্রণয়নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ, মূলধন ব্যয় কমানো, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সব বিষয়ে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান ও শিল্প উন্নয়নের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই