শিলংয়ে জটিল চর্মরোগে কাতরাচ্ছেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন

ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজের পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং পুলিশের হাতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটকের পর জামিনে মুক্ত বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের প্রবাস জীবন কাটছে নানা রোগে-সুখে।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকার শর্তের জামিন পাওয়ায় শরীরে বাসা বাঁধা জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে তিনি ভারতের অন্য রাজ্যে যেতে পারছেন না। মুক্ত সালাহ উদ্দিন আহমেদ অনেকটা শিলং শহরের মধ্যে ‘বন্দি’ জীবন যাপনই করছেন। আর উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারায় তিনি দীর্ঘ দিনের হৃদরোগের সাথে নতুন করে চর্ম রোগে ভূগছেন। বিশেষ করে চর্ম রোগ খুব জটিল আকার ধারণ করায় তিনি প্রতিনিয়ত অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগছেন বলে স্বজনদের জানিয়েছেন।

বর্তমানে অস্থায়ীভাবে শিলংয়ের ভাড়া বাসায় তার সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন ভাগিনা মহসিন ও পিএস এনাম। জরুরী ভিত্তিতে ভারতের মুম্বাই বা চেন্নাই নিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসা করানো উচিত বলে মনে করছেন তাকে দেখা আসা চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন।

গত তিন দিন ব্যক্তিগত সফরে ভারত গিয়ে সেখানে দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দেখে এসেছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রামে ফিরে তিনি জানিয়েছেন কেমন আছেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

ডা. শাহাদাত বলেন, ‘উনি জামিনে মুক্তি পেলেও শর্তের কারণে শিলং শহেরর বাইরে যেতে পারছেন না। সেখানে একটি ভাড়া বাসায় তাকে রাখা হলেও মূলত এক প্রকার বন্দি জীবন যাপনই বলা যায়। তবে বাংলাদেশ থেকে যে যাচ্ছে, সেই তার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছে। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। এখন নতুন করে তাকে চরমভাবে কষ্ট দিচ্ছে চর্মরোগ। চর্মরোগ এমন জটিল আকার ধারণ করেছে যে, এটির যন্ত্রণায় তিনি রীতিমত ছটপট করছেন। এজন্য তিনি বারবার উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের অন্য রাজ্য তাকে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থার আবেদন করছেন। তবে শিলং পুলিশ তাকে অন্য রাজ্যে যেতে দিচ্ছে না।’

‘সালাহ উদ্দিন সাহেব মানসিকভাবে এখন অনেকটা শক্তিশালী। সেখানে ভাড়া বাসায় তার ভাগিনা মহসিন ও পিস এনাম সেবাযত্ন করছেন। আর বাংলাদেশ থেকে পরিবারের লোকজনসহ দল ও দলের বাইরে অনেক শুভার্থীরা শিলং গিয়ে তার সাথে দেখা করে আসছেন। তবে তার হৃদরোগ ও চর্ম রোগের কারণে তিনি খুবই কষ্টে আছেন। বিশেষ করে চর্মরোগের উন্নত চিকিৎসা করানো তার জন্য খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।’ বলেন চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন।

দেশ ও দল নিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদের চিন্তা ভাবনা কেমন? জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘শারীরিক অবস্থার কারণে উনি এখন দেশ ও দল নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা করছেন না। টুকটাক খবরাখবর রাখলেও এসব নিয়ে আমার সাথে কোনো আলোচনা হয়নি। তার প্রধানতম চিন্তায় রয়েছে তিনি কীভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন। আর আইনিপন্থা মোকাবেলা করে কেমন করে দেশে ফিরবেন।’

এরআগে চলতি বছরের ৬ জুন ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় স্থানীয় আদালত শর্ত স্বাপেক্ষে তার জামিন মঞ্জুর করেছিল। ওই্ সময়ে গণমাধ্যমকে তার আইনজীবী এস পি মোহান্ত জানিয়েছিলেন, ‘সালাহ উদ্দীন আহমেদ ইস্ট খাসি হিলস জেলা ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না এবং প্রতি সপ্তাহে তিনি শিলংয়ের পুলিশ সুপারের কাছে হাজিরা দেবেন এমন শর্তে তাকে জামিন দেয়া হয়।’ যদিও এরআগে একাধিকবার জামিন আবেদন করলেও ইন্টারপোলের রেড নোটিস আছে জানিয়ে তার জামিন না মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ১০ মার্চ ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হওয়ার ৬৩ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে খোঁজ মিলে সালাহ উদ্দিন আহমেদের। মানসিক হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে বর্তমানে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে শিলংয়ের একটি ভাড়া বাসায় প্রবাস জীবন যাপন করছেন।

তার পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, সরকারের একটি নিরাপত্তা বাহিনী তাকে উত্তরার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট বাহিনী ওই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে।

চলতি বছরের ১১ মে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ২৬ মে শিলং পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করায় ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছিল মেঘালয় রাজ্য পুলিশ।

সাবেক আমলা সালাহ উদ্দিন আহমেদ ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। । এরপর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে বিএনপি-তে যোগ দেন। এর পরেরবার ৯৬ সালেও আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। আবার ২০০১ সালের নির্বাচনে কক্সবাজারের চকোরিয়া থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এর পরের বারও তিনি বিরোধী দলীয় সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে ২০১১ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় তিনি দুর্নীতি মামলায় দ-িত হলে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তার আসনে নির্বাচন করে সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপরের বার বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করলেও সালাহ উদ্দিন আহমেদ বিএনপির কেন্দ্রিয় যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের বিএনপির সংকটকালীন সময়ে বিএনপির মূখপাত্রের দায়িত্ব পালন করার সময়েই তিনি ‘নিখোঁজ’ হন। পরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে তাকে আবিষ্কার করে শিলং পুলিশ।



মন্তব্য চালু নেই